নব্যেন্দু হাজরা: মা, মশা কামড়াচ্ছে। দেখো লাল হয়ে গেল। সকালের দমদমগামী এসি রেকে মাশার কামড়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে কান্না জুড়েছিল বছর সাতেকের ছোট্ট ঋষভ। ট্রেনের কামরায় ভিড়ের মধ্যেই মাকে জড়িয়ে ধরে সে। কিন্তু তার ওই ছোট্ট কথাতেই উদ্বেগ বাড়ে যাত্রীদের।
যে হারে ডেঙ্গু হচ্ছে, মেট্রোর এসি কোচেও মশা! এবার তো শরীরে স্প্রে করে বেরোতে হবে। লোকাল ট্রেনে তবু আরশোলা, পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা যায়, কিন্তু এখন তো দেখি এসি কোচও নিরাপদ নয়, বক্তব্য অন্য যাত্রীদের।
দিনে যেখানে গড়ে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন, শহরের সেই লাইফলাইনে ঘোরাঘুরি করছে না তো এডিস মশা! চিন্তাটা যে শুধু যাত্রীদের মাথাতেই এসেছে তেমন নয়। এসেছে মেট্রোকর্তাদের মনেও। তাই রেক থেকে কারশেড পরিষ্কার-নিয়মিত চলছে জোরকদমে। মেট্রো কর্তারা জানাচ্ছেন, টানেলে থাকা ড্রেন এবং রেলের ট্র্যাকে মশার লার্ভা জন্মানো আটকাতে লার্ভিসাইট স্প্রে করা হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন করে তা করা হয়।
এছাড়া রোজ শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পর প্রতি স্টেশনে মশা মারার রাসায়নিক স্প্রে করা হয়। যাকে বলা হয় অ্যান্টি অ্যাডাল্ট মসকিউটো। নোয়াপাড়া এবং কবি সুভাষ কারশেডে জমা জলে বা ড্রেন যাতে মশার লার্ভা না জন্মায় সে কারণে ফগিং হয় সেখানে। তাছাড়া কর্মীদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেক যেমন পরিষ্কার রাখতে হবে, তেমনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেখানে রেক থাকে, সেই কারশেডও। ট্রেন ধোয়ার জন্য জল জমিয়ে রাখা যাবে না ড্রামে। নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে দুই লাইনের মাঝে থাকা ড্রেনও। কারণ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গুর মশা জন্মায় জমা জলেই। আর সুড়ঙ্গে থাকা ড্রেন এবং ট্র্যাকে জল জমে থাকে। তাই তা নিয়মিত পরিষ্কার করার দাওয়াই দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনেই রেক ছাড়ার আগেও তাতে দেওয়া হচ্ছে মশা মারার স্প্রে। নিয়মিত ‘ওয়েট ওয়াশ’ ও করানো হচ্ছে। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নোয়াপাড়া কারশেডে মাঝেমধ্যেই সারপ্রাইজ ভিজিট করছে মেট্রোর মেডিক্যাল টিম। কোথাও কোনওরকম জল জমে থাকছে কি না তা দেখে আসছেন তাঁরা। দেখা হচ্ছে পোকামাকড় মারার বিভিন্ন ওষুধ জায়গামতো দেওয়া হচ্ছে কি না! তাছাড়া কারশেডে ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং পাউডারও।
তবে আধিকারিকদের কথায়, এমনিতেই রেক নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু এই সময়ে হয় বেশি। তাই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রেক দাঁড়ানোর শেডও পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মাতে পারে, এমন কোনও পরিস্থিতি যেন মেট্রোর এলাকায় না থাকে, সে বিষয়েই সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।
সুড়ঙ্গেও কী এডিস মশা জন্মাতে পারে? মেডিসিন বিভাগের বিশিষ্ট চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “সামান্য জলেও ডেঙ্গুর মশা জন্মাতে পারে। কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। তা মেট্রোর কারশেডই হোক বা রেক। নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।”
মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড় মারার স্প্রে নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে সুড়ঙ্গে। সুড়ঙ্গে ড্রেন এবং রেলের ট্র্যাকে মশার লার্ভা জন্মানো আটকাতে লার্ভিসাইট স্প্রে করা হচ্ছে। শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পর তা করা হয়। পরিষ্কার হয় কারশেডও।” পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সজাগ হয়েছে রেলও। প্রতিটি কোচ পেস্টিসাইড দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। কারশেডও হয় নিয়মিত পরিষ্কার। কোচ পরিষ্কারের জন্য জল জমিয়ে রাখা হয় না। রানিং ওয়াটারেই ধোয়া হয় কোচ, জানান দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.