নব্যেন্দু হাজরা: করোনা সংক্রমণ রুখতে নতুন পরিকল্পনা করল মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রো চালু হলে প্রতি কোচে ৫৪ জনের বেশি উঠতে দেওয়া হবে না। গোটা ট্রেনে থাকবে মাত্র ৪৩২ জন। সংখ্যাটা পূরণ হয়ে গেলে আর কেউ উঠতে পারবে না। প্রতি স্টেশনে যতজন নামবেন, ততজন যাত্রীকেই ট্রেনে উঠতে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী হয়ে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে মেট্রো স্টেশনে ঢোকার মূল গেট। তাই ট্রেন ধরতে আসা বাকি যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে হবে স্টেশনের বাইরে। আর সেই লাইনের দেখভালের দায়িত্বে থাকবে কলকাতা পুলিশ। লাইফলাইন চালুর আগে আপাতত এমন পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার নবান্নে জানান, মেট্রো কর্তৃপক্ষ চাইলে ১ জুলাই থেকেই যাত্রী পরিষেবা চালু করতে পারে। তবে যতগুলি আসন ততজন যাত্রীই উঠতে পারবেন। কীভাবে মেট্রো চলবে তা পুলিশের সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে ঠিক করবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই শুরু হয়ে যায় মেট্রো ছোটানোর যাবতীয় প্রস্তুতি। তবে ১ জুলাই থেকেই ছুটবে কিনা তা এখনও ঠিক হয়নি। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, রেলবোর্ডের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই সচল করা হবে শহরের লাইফলাইন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বড় চিন্তা, সিটের বেশি যাত্রী হচ্ছে কিনা প্রতি মেট্রোর প্রতি কামরায় তা নজরদারি করবে কে? কারণ ওই বিপুল সংখ্যক আরপিএফ মেট্রোর হাতে নেই। তাই কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে। নিজের ভাল নিজে বুঝে ভিড় এড়াতে হবে। মেট্রো সব ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার ভিডিও যাবতীয় সব কিছু করবে।
তবে মেট্রো সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক পরে স্টেশনে ঢুকতে হবে। স্টেশনে প্রবেশের আগে সকলের থার্মাল স্ক্যানিং হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে যাত্রীকে আর স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে প্ল্যাটফর্ম এবং টিকিট কাউন্টারের বাইরে হলুদ দাগ দিয়ে যাত্রীদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা থাকছে। এক মিটার অন্তর দাঁড়াতে হবে তাদের। স্টেশনে থাকা কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা প্রত্যেকেই পিপিই পড়ে কাজ করবেন। হাতে থাকবে গ্লাভস। কর্মীদের কোনভাবে যাত্রীদের সঙ্গে হাত মেলানো বা সংস্পর্শে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। মেট্রো রেলের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার এম সুরেশ আরপিএফ আধিকারিকদের এই নির্দেশিকা কিছুদিন আগেই পাঠিয়েছেন।
মেট্রোয় এতদিন একই গেট দিয়ে যাত্রীরা প্লাটফর্মে ঢুকতেন আবার বেরোতেন। কিন্তু এবার থেকে মেট্রোর এন্ট্রি এবং এক্সিট গেট আলাদা করা হচ্ছে। যাত্রীরা যে গেট দিয়ে পাতালে নামবেন সেখান দিয়ে আর তাদের বেরোতে দেওয়া হবে না। যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থানের মূল গেটে কর্তব্যরত আরপিএফ এবং প্ল্যাটফর্মের আরপিএফরা সব সময় ওয়াকিটকির মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করবেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী প্লাটফর্মে হয়ে গেলে সেখান থেকে মূল গেটে থাকা রেল পুলিশকে তা জানানো হবে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে মূল গেট। ট্রেন এলে যাত্রীরা তাতে উঠবেন। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হবে। তখন সেই খবর জানানো হবে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা আরপিএফকে। পরবর্তী ট্রেনের জন্য তখন আবার যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকবেন। অকারণে মেট্রো স্টেশনে বসে থাকা বা ঘোরাঘুরি করা যাবে না।
স্টেশনে ঢোকার মূল আটকে দিলে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যেতে পারে স্টেশনের বাইরে। কখনও কখনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতে পারে। তা সামাল দেওয়ার জন্যই মেট্রোরেলের তরফে কলকাতা পুলিশকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হবে। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেট্রো পরিষেবা চালুর জন্য সবরকমভাবে প্রস্তুত। রাজ্য সরকার প্রথমে মেট্রো চালানোর কথা রেল মন্ত্রককে জানাবে। রেল মন্ত্রক তাতে সায় দিলে তা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানাবে। তারপর মেট্রোর আধিকারিকরা পুলিশের সাথে বৈঠক করে ঠিক করবে কীভাবে গোটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে মেট্রো চালু করা যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.