ফাইল ছবি
নব্যেন্দু হাজরা: একশো টাকা আয় করতে গিয়ে পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় হাজার টাকা। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসার হাল কী হয়? যা হওয়া স্বাভাবিক, তাই হয়। ভাঁড়ার ফোঁপরা হয়ে দিন আনি দিন খাই দশা। যেমনটা হয়েছে কলকাতা মেট্রোরেলের (Kolkata Metro)। কোভিডকালে (COVID-19) যাত্রীর আকাল মেট্রোর আর্থিক অবস্থাকে খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুরাহার কোনও দিশা মিলছে না। পরিস্থিতি এমন যে, একের পর এক মেট্রোর জায়গা ভাড়া দিয়ে ভাঁড়ার ভরাতে হচ্ছে।
একদিকে স্কুল-কলেজ বন্ধ। বহু অফিসে ওয়ার্ক ফর্ম হোম চলছে। তার উপর সংক্রমণের আশঙ্কায় এখনও মেট্রোয় টোকেন চালু হয়নি। শুধু স্মার্ট কার্ডধারীরাই মেট্রোয় চড়তে পারছেন। আর তাতেই যাত্রীর আকাল পাতালপথে। আগে যেখানে দিনে গড়ে সাড়ে ছ’লাখ যাত্রী যাতায়াত করতেন, সেখানে এখন মেট্রোয় দিনে চড়ছেন মাত্র আড়াই লাখ যাত্রী! ফলে টিকিট বিক্রি থেকে আয় কমে গিয়েছে অনেকটাই। তাই পরিষেবা দিতে গিয়ে খরচের ভারে নাজেহাল কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর মেট্রো চালু হলেও যাত্রী সংখ্যা তাতে এতটাই কমে গিয়েছে যে চারগুণ খরচ বেড়েছে। আগে যেখানে মেট্রোর ১০০ টাকা আয় করতে ২৬৪ টাকা খরচ হত, সেই খরচ বেড়ে প্রায় হাজার টাকা হয়েছে। অপারেশনাল কস্ট এতটা বেড়ে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পাতালের কর্তাদের। সূত্রের খবর, এখন মেট্রোর ১০০ টাকা আয় করতে খরচ হচ্ছে ৯৪৩ টাকা। কর্তাদের কথায়, একটা সময়ে ১০০ টাকা আয় করতে ৩০০ টাকা খরচ হত। কিন্তু যাত্রী বাড়তে থাকায় তা কমে ২৬৪ টাকা হয়। এখন তা চারগুণ বেড়েছে। তাছাড়া বেড়েছে খরচও। কারণ আগে আটটি নন-এসি রেক চলত। তাতে খরচ অনেক কম। কিন্তু এখন সবকটি রেক এসি হয়ে যাওয়ায় খরচ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
রোজগার বাড়াতে তাই এবার বিকল্প পন্থা অবলম্বন করেছে মেট্রো। কলকাতা মেট্রোর সাতটি স্টেশনকে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আগেই, সেই পদক্ষেপে এবার মেট্রো স্টেশনের স্মার্ট গেটও ব্র্যান্ডিং করা শুরু হয়েছে। পাতালপথের একাধিক মেট্রো স্টেশনে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, সব স্টেশনেই এই ব্যবস্থা করা হবে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এর ফলে বার্ষিক ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা আয় হবে কলকাতা মেট্রো রেলের। এর আগে দমদম, নোয়াপাড়া, বেলগাছিয়া, এসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রিটের মতো স্টেশনগুলিতে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনকে ব্র্যান্ডিং করা হবে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে এই ব্র্যান্ডিং করা হবে বলে জানা গিয়েছে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে, যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের থেকে এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। কিন্তু যেহেতু নিজেরা ভাড়া বাড়াতে পারবে না মেট্রো, সেই কারণেই বিকল্প উপায় ভাবা হচ্ছে।
এখন মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে ঠিকই, তবে একদিকে যেমন লোকাল ট্রেন কম থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কম। অন্যদিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম থাকাতেও মেট্রোর যাত্রী কমে গিয়েছে। তবে টোকেন চালু না হওয়াতেই যে যাত্রী এতটা কমেছে তা মেনে নিচ্ছেন মেট্রো কর্তারাও। মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষকুমার ঘোষ বলেন, “কোভিডের পর মেট্রো চালু হলেও যাত্রীসংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। ফলে আমাদের অপারেশনাল রেশিও অনেকটাই বেড়েছে। ১০০ টাকা আয় করতে প্রায় হাজার টাকা এখন খরচ হচ্ছে। তাই বিকল্প উপায়ে আয় বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.