নব্যেন্দু হাজরা: মশা মারতে পাতালপথে যতই স্প্রে চলুক, শহরে নির্মীয়মাণ মেট্রোই যেন মশার আতুঁড়ঘর। চিনার পার্ক থেকে শুরু করে নিকোপার্কের সামনে প্রকল্প এলাকায় সর্বত্র কনেটনার ভরতি জমা জল। সেই জলেই কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
শহরে বর্তমানে তিনটি মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজের জন্য নানা উপায়ে সেখানে জমিয়ে রাখা হয় জল। তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। দিনের পর দিন ব্যবহার না করা এই জল জমেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। শহরে বাড়ছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে কলকাতা পুরসভার তরফে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বারবার নাগরকিদের সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ, নির্মীয়মান মেট্রোপ্রকল্পে ড্রাম, কনটেনারে জমা জলেই বাড়ছে বিপদ। বুধবার সকালে যেমনটা দেখা গেল চিনারপার্কে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আগেই বিষয়টি নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, প্রকল্প এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য। জল না জমানোর কথা। কিন্তু তারপরও যে পরিস্থিতি বদলায়নি তা দেখা গেল বুধবারের চিত্রেই। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা প্রকল্পের নির্মীয়মাণ সংস্থা আরভিএনএল এবং কেএমআরসিএলকে জানিয়েছি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। ডেঙ্গু রুখতে সবরকম ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুর মশা জন্মায় এমন কোনও কিছু করাই কারও কাম্য নয়।’’
শহরে এখন ইস্ট-ওয়েস্ট, জোকা-ধর্মতলা এবং নিউ গড়িয়া-এয়ারপোর্ট, সব প্রকল্পের কাজের জন্যই একাধিক জায়গায় জল ধরে রাখে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, নিয়মিত সেই জল পরিষ্কার করা হয় না। আর তাতেই জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিম থেকে মশা জন্মাতে সাতদিন লাগে। আর এখানকার জল আরও বেশিদিন ধরে জমানো থাকে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ পুর আধিকারিকরাও। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘জমা জলে মশা ডিম পাড়লে ৪৮ ঘণ্টা পর তা থেকে লার্ভা তৈরি হয়। লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হতে আরও দিন পাঁচেক সময় লাগে।”
এদিকে, ঠান্ডা বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমবে বলেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই আশায় আপাতত জল ঢেলেছে আবহাওয়া দপ্তর। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত শীত পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বরং ঠান্ডা কমবে আগামী কয়েকদিন। তাপমাত্রা বাড়বে। কলকাতায় পুরোপুরি শীত পড়তে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ হয়ে যাবে। ফলে আবহাওয়ার কারণে এখনই ডেঙ্গু বিদায় নেওয়ার আশা কম। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘আপাতত পাকাপাকি শীত পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। কমবে ঠান্ডা।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.