অর্ণব আইচ: অপরাধের নিখুঁত ছক। প্রায় আধ কিলো সোনা নিয়ে উধাও কর্মচারী। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের। পলাতক কর্মচারীর সন্ধানে তল্লাশি পুলিশের। কিন্তু রহস্যের মোড় নিল কর্মচারীটি গ্রেপ্তার হতেই। ভেস্তে গেল ‘নিখুঁত ছক’। কর্মচারীর দাবি শুনেই পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ। সোনা ‘চোর’ যে দোকানের মালিক নিজেই। কর্মচারীকে সাত লাখ টাকা কমিশনের টোপ দিয়ে শুধু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে দোকানের মালিক। এরপর দোকানের মালিক নিজেই সোনা হাতিয়েছে।
জেরার মুখে সে স্বীকার করে, ২৫ লাখ টাকার গয়না চুরির মাস্টারমাইন্ড সে নিজেই। শেষ পর্যন্ত চুরির ঘটনার ‘অভিযোগকারী’ নিজেই যে অভিযুক্ত, তার প্রমাণ মেলে। ওই ‘অভিযোগকারী’ দোকানের মালিক সুশীল সোনি, দোকানের দুই কর্মচারী বিমল সোনি ও চন্দ্র বর্মনকে গ্রেপ্তার করেছেন মধ্য কলকাতার (Central Kolkata) পোস্তা থানার আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, পোস্তা থানা (Posta PS) এলাকার বড়তলা স্ট্রিটে রয়েছে সুশীল সোনির সোনার গয়নার দোকান। এই দোকানেই কাজ করত বিমল সোনি ও চন্দ্র শর্মা। বিভিন্ন বড় দোকান থেকে সোনা নিয়ে এসে গয়না তৈরি করত সে। কিছুদিন আগেই ২৫ লাখ টাকা দামের ৪৮৫ গ্রাম সোনা গয়না তৈরির জন্য সুশীল সোনিকে দেয় একটি বড় দোকান। পোস্তা থানায় সে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, তার কর্মচারী বিমল সোনি পুরো সোনা চুরি করে পালিয়েছে। পুলিশ মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে জানতে পারে যে, নিউ দিঘায় পালিয়েছে সে। তার পর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ। সুশীলকে সঙ্গে নিয়েই বিমলের সন্ধানে পুলিশ নিউ দিঘায় যায়। একাধিক হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, নিউ দিঘা থেকে পালিয়ে গিয়েছে সে। তার কল ডিটেইলস থেকে পুলিশ কয়েকজন বন্ধুর নম্বর পায়। তাঁদের ফোন করে পুলিশ অফিসাররা বলেন, বিমল যোগাযোগ করলেই যেন তাঁরা পুলিশকে খবর দেন।
হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা এক বন্ধুর সঙ্গে বিমল যোগাযোগ করে। সেই তথ্য পুলিশের কাছে আসে। সেইমতো ফাঁদ পাতে পুলিশ। সোমবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ধরা পড়ে বিমল। তাকে জেরা করে সোনা উদ্ধারের চেষ্টা করতেই সে জানায়, সোনা তার কাছে নেই। সোনা আছে তার দোকানের মালিক সুশীল সোনির কাছে। সে সাত লাখ টাকার লোভে মালিকের কথা শুনেই নিউ দিঘা পালিয়ে যায়। যদিও দু’লাখ টাকা পেয়েছিল সে। অন্য একটি সিমকার্ড নিয়ে সবাইকে ফোন করছিল। তার বক্তব্য অনুযায়ী সুশীলকে পুলিশ জেরা করতে শুরু করে। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে জানায়, সে নিজেই গয়না চুরির ছক কষে। তাকে সাহায্য করে অন্য কর্মচারী চন্দ্র। সুশীল ২৫ লাখ টাকার পুরো গয়না হস্তগত করে সুশীলকে বলে, সে তার বিরুদ্ধে চুরির মামলা করবে। সোনা তার কাছেই থাকবে। মাস তিনেক বাদে সে বিমলের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেবে। এর পর সেই সোনা বিক্রি করে দেবে তারা। চন্দ্রকেও মোটা টাকা ভাগ দেওয়ার টোপ দিয়েছিল সে।
সুশীলকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে চুরির পুরো গয়না উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার তিনজনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে সুশীল ও চন্দ্রকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বিমলকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। দুই ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.