ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: দশ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে সংসার। স্বামী সিবিআই (CBI) অফিসার। স্বামীকে নিয়ে রীতিমতো গর্বিত ছিলেন মহিলা। কিন্তু মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল বিয়ের দশ বছর পর। জানতে পারলেন, স্বামী ‘ভুয়ো’ সিবিআই অফিসার। আসলে তিনি এক প্রতারণার অভিযুক্ত।
দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ছেড়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তর কলকাতার (Kolkata) বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার ব্যাংকশাল আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন সৌমেন দাস নামে ওই ব্যক্তি। তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবীরা। সরকারি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, সৌমেন দাস নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে ২০১০ সালে আলাপ হয় উত্তর কলকাতার এপিসি রোডের বাসিন্দা এক যুবতীর। সল্টলেকের সেক্টর থ্রি’র বাসিন্দা সৌমেন দাস নিজেকে সিবিআইয়ের সাব ইন্সপেক্টর বলে পরিচয় দেন। সপক্ষে যুক্তি দিতে একটি ভুয়া পরিচয়পত্রও ওই যুবতীকে দেখান। নিজেকে ক্ষমতাবান বলেও দাবি করেন ওই ব্যক্তি। যুবতী বিয়েতে রাজি হন। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় সৌমেনের। প্রথমে সংসার সুখেরই ছিল। দম্পতির দুই সন্তানও জন্ম নেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি স্ত্রীর কাছে কখনও দাবি করেন, তাঁর অফিস নিজাম প্যালেসে। আবার কখনও দাবি করেন, তিনি বদলি হয়ে গিয়েছেন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। তাঁর স্ত্রীও বিশ্বাস করতেন স্বামীকে। কিন্তু গত বছর থেকেই সংসারে গোলমাল শুরু হয়। পুলিশের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, একই পদ্ধতিতে আরও কয়েকজন যুবতীর সঙ্গে প্রতারণার ছক কষে ওই ব্যক্তিটি। নিজেকে সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতারণা করতেন, এমন অভিযোগ তাঁর স্ত্রীর কানেও আসে।
প্রথমে স্ত্রী বিশ্বাস না করলেও পরে তিনি ও তাঁর বাপের বাড়ির সদস্যরা সিবিআই অফিসে গিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এরপরই তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ওই মহিলা জানতে পারেন যে, সৌমেন দাস নামে সিবিআইয়ের কোনও সাব ইন্সপেক্টরের অস্তিত্ব আদৌ নেই। এরপর তিনি নিশ্চিত হন যে, স্বামী ভুয়ো সিবিআই অফিসার। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলাও রয়েছে। তিনি বিশেষ কোনও কাজকর্ম করেন, এমনও নয়। অথচ দম্পতির দু’টি সন্তানও রয়েছে। এর পরেও স্বামীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ওই মহিলা। দশ বছর পর স্বামীর এই জালিয়াতি মেনে নিতে পারেননি তিনি। দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই শ্বশুরবাড়ি ছাড়েনি তিনি। বাপের বাড়িতে চলে আসেন। ফেব্রুয়ারিতে তিনি বড়তলা থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, উধাও হয়ে যান সৌমেন। তাঁর হদিশ পুলিশ পায়নি। এর মধ্যেই আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন তিনি। আপাতত পুলিশ হেফাজতে ঠাঁই হয়েছে তাঁর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.