নব্যেন্দু হাজরা: কোথাও মেট্রোর কাজের জন্য, কোথাও আবার যানজট এড়ানোর লক্ষ্য, কোথাও বা রাস্তার কাজ৷ এমনই একাধিক কারণে শহরের অধিকাংশ রুটেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রাম। হাতে গোনা যেখানে চলছে, তাও অনিয়মিত। ফলে শহরের ঐতিহ্যশালী এই যানের স্থান হয়েছে ডিপোয়। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই ঝুল পড়েছে প্রায় শ’দুয়েক ট্রামে। কোনওটা আবার স্ক্র্যাবও হয়ে গিয়েছে।
[ আরও পড়ুন: ফের চুরি করতে গিয়েই বিপত্তি, হাতেনাতে ধৃত রামমোহন রায় মিউজিয়ামে চোরা অভিযানের পাণ্ডারা]
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, বছর ছয়েক আগেও কলকাতায় ২৫টি রুটে ট্রাম চলাচল করত। সেই সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে সাতে। যে কটি রুটে চলে, তাও সময় মেনে নয়। কারণ, একদিকে যেমন তাতে যাত্রীর আকাল, তেমনই যানজটের সমস্যা। এমনকী শহরে গতি আনতে অধিকাংশ রুটেই ট্রাম বন্ধ করার কথা বলেছে ট্রাফিকও। তাই কলকাতার এই যান আপাতত ইতিহাসের পথে।
দু’কামরার বদলে এক কামরার ট্রাম নামানো হলেও বিশেষ লাভ হয়নি। সিটিসি সূত্রে খবর, বর্তমানে শ্যামবাজার-ধর্মতলা, হাওড়া ব্রিজ-শ্যামবাজার, বিধাননগর-হাওড়া ব্রিজ, রাজাবাজার-বিধাননগর, গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড, খিদিরপুর-শহিদ মিনার এবং টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে ট্রাম চলছে। যা থেকে দিনে আয় প্রায় সত্তর থেকে পঁচাত্তর হাজার টাকা।
[ আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর কারণ বাংলাদেশি মশা! পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে গিয়ে এ কী বললেন মমতা ]
সূত্রের খবর, একটি ট্রাম তিন চারটি ট্রিপ চলে। অথচ তা থেকে আয় মেরেকেটে হাজার দুয়েক টাকা। কোনও কোনও দিন তাও হয় না। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, অধিকাংশ লাভজনক রুট অর্থাৎ যেখানে টিকিট বিক্রি বেশি হত, তা বন্ধ। কোনওটা ফ্লাইওভারের, আবার কোনওটা মেট্রোর কাজের জন্য। আবার পুলিশই শহরের গতি আনতে বহু রুটে ট্রাম চালানো বন্ধ করতে বলেছে। ফলে বালিগঞ্জ-ধর্মতলা, টালিগঞ্জ-ধর্মতলা, বেলগাছিয়া-ধর্মতলা, বিধাননগর-ধর্মতলা, বেলগাছিয়া-বিবাদি বাগ, শ্যামবাজার-বিবাদি বাগ, গালিফ স্ট্রিট-ধর্মতলা–র মতো বহু ভাল রুট বন্ধ। যে কারণে আয়ও কমেছে নিগমের। আরও বন্ধ হতে বসেছে ট্রাম। কখনও কখনও শ্যুটিংয়ের কাজে বা জয় রাইড করিয়ে কিছু টাকা আসে বটে, তবে তা তো আর সারা বছর নয়।
ট্রাম কমার পাশাপাশি বেশ কিছু ডিপোও বন্ধ হয়েছে সিটিসির। বর্তমানে ডিপো আছে সাতটি। সেখান থেকে আবার ইলেকট্রিক বাসের চার্জিং দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রামের বদলে সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইলেকট্রিক বাসই। এখনও সিটিসি–তে প্রায় ২০০ জন চালক রয়েছেন বলে জানান এক কর্তা।
শহরের দ্রুত গতির পক্ষে ধীর গতির ট্রাম বেমানান, যুগের বিচারে অচল হয়ে যাওয়া ওই যান আখেরে অন্যান্য দ্রুত গতির যানের পথে বাধার সৃষ্টি করে। এই সব ভাবনার মধ্যেই ট্রাম যে হারিয়ে যাচ্ছে সেকথাই বলছিলেন নোনাপুকুর ডিপোর এক চালক। তবে তিনি আরও বলেন, “বহু যাত্রী রয়েছেন, যাঁরা শুধু ট্রামেই চড়েন। কারণ তাঁরা ট্রামকে ভালবাসেন। অথচ দেখা যাচ্ছে, তিনি যেখান থেকে উঠতেন সেই রুটেই ট্রাম উঠে গেল। এভাবেই ‘কমিটেড যাত্রীরাও’ মুখ ফিরিয়েছেন ট্রাম থেকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.