সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় : উল্টোডাঙার তরুণী গৃহবধূ অর্চনা পালংদার খুন ও তাঁর তৃতীয় প্রেমিক বলরামের মৃত্যু রহস্যে তদন্তে নয়া মোড়! বলরামকে ছেড়ে গৃহবধূ অর্চনা তাহলে কি চতুর্থ কোনও ব্যক্তির সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন? তা জানতে পেরেই কি নিউ মার্কেটের হোটেলে ডেকে অর্চনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর বলরাম নিজেও আত্মঘাতী হয়েছে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছে আনন্দপুর থানার পুলিশ। উত্তর খুঁজতে অর্চনার স্বামী পিন্টু পালংদারের সঙ্গেও কথা বলতে চান তদন্তকারী অফিসাররা।
পুলিশের সন্দেহের তালিকাতে রয়েছেন নিউ মার্কেটের ‘হোটেল আটলান্টিকা’-এর মালিক অর্জুন কাপুর, পলাতক ম্যানেজার জয়দেব মাহাতো, তার বাবা হরিহর ও হোটেলের কয়েকজন কর্মীও। পলাতক ম্যানেজার জয়দেব ও তার বাবা হরিহরের সন্ধানে সোমবারও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশের একটি দল। কিন্তু এদিনও তাদের কোনও সন্ধান মেলেনি। মালিক অর্জুন কাপুর আগেই জানিয়েছিলেন, “হোটেল চালানোর যাবতীয় দায়িত্ব ছিল ম্যানেজার জয়দেবের উপর। আমি হোটেলের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তাই হোটেলের ২ নম্বর রুমে গৃহবধূ খুনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”
মালিকের দেওয়া এই তথ্য মানতে নারাজ আনন্দপুর থানার পুলিশ। তাদের প্রশ্ন, মালিক হোটেল চালাচ্ছেন অথচ তিনি কিছুই জানেন না তা হতে পারে না। এছাড়াও নিউমার্কেটের সোসাইটি সিনেমার উলটোদিকের ওই হোটেলে কোনও সিসিটিভি ছিল না। এর ফলে এই হোটেলে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তার কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এতদিন পর্যন্ত মালিক এই হোটেলে সিসিটিভি বসাননি কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পাশাপাশি খুন বা আত্মহত্যার ঘটনার পর দু’টি মৃতদেহই রাতারাতি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হল কেন? পুলিশি জেরায় ধৃত হোটেলকর্মী আশিস যাদব জানিয়েছেন, পুলিশ ও আইনের ঝামেলা যাতে না হয় তার জন্যই অর্চনা ও বলরামের দেহ রাতারাতি একটি ক্যাবে চাপিয়ে ফেলে দেওয়া হয় আনন্দপুরের লকগেটে। এই যুক্তিও মেনে নিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এর আগেও শহরের বহু হোটেলেই খুন, আত্মহত্যা বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই সমস্ত ঘটনার তদন্তে কখনই হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। লোপাট হয়নি কোনও মৃতদেহ। তবে কি নিউ মার্কেটের ক্ষেত্রে হোটেল ম্যানেজার ও কর্মীদের দিক থেকেও কোনও অপরাধ ছিল? সেই অপরাধ বোধ থেকেই রাতারাতি অর্চনা ও বলরামের মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়? উত্তর খুঁজতে ধৃত হোটেলকর্মী আশিস যাদবকে আরও জেরা করছে আনন্দপুর থানার পুলিশ। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এর সঠিক উত্তর তখনই জানা যাবে যখন হোটেল ম্যানেজার জয়দেব ও তার বাবা হরিহরের সন্ধান মিলবে। গ্রেপ্তারের পর ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলে তবেই সমস্ত রহস্যের কিনারা করা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.