গৌতম ব্রহ্ম: প্রসব বেদনার সময় যদি কাছের মানুষ পাশে থাকে? নিজের মা বা শাশুড়ি, কিংবা সহোদরা? তাঁরা যদি লেবার রুমে মজুত থেকে প্রসূতির মাথায় হাত বুলিয়ে ভরসা জোগান? কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তেষ্টা পেলে খাইয়ে দেন জল? প্রসব বেদনা অনেকটাই লাঘব হয়। সময়ও কম লাগে। সহজ হয় ডাক্তার-নার্সের কাজও। এমনটাই বলছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ বা WHO। এই মন্ত্রেই এবার সরকারি হাসপাতালের লেবার রুমে মজুত থাকছে প্রসূতির বাড়ির লোক। একেবারে ইউরোপের ‘বার্থ কম্প্যানিয়ন’ মডেলের ধাঁচে।
অগ্রাধিকার পাচ্ছেন প্রসবের অভিজ্ঞতা থাকা মহিলারাই। তবে কয়েকটি শর্ত আছে। যেমন ‘প্রসব সঙ্গী’কে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চলবে না। লেবার রুমে ডাক্তার-নার্সদের কাজে চলবে না নাক গলানো। আর অবশ্যই হতে হবে সাহসী।
পথ দেখিয়েছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। গত সেপ্টেম্বর থেকেই পার্ক সার্কাসের এই সরকারি হাসপাতালের লেবার রুমে মজুত থাকছেন বার্থ কম্প্যানিয়নরা। তিনি মা, শাশুড়ি, বউদি, মাসি, কাকিমা, পিসিমা, যে কেউ হতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড়ের উপর নীল রঙের গাউন পরিয়ে তাঁদের লেবার রুমে ঢোকানো হচ্ছে। এখন ৮৫ শতাংশ স্বাভাবিক প্রসবেই বাড়ির লোক থাকছে। এমনটাই জানালেন ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতি বিশ্বাস। যদিও বিদেশের অনুকরণে স্বামী এখনও প্রসবের সময় লেবার রুমে মজুত থাকার সুযোগ পাননি। গত ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ন্যাশনালের এই প্রকল্প উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে দিল্লিতে। আরতিদেবীকে শংসাপত্র দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম কমিশনার দীনেশ জয়সওয়াল।
আরতিদেবী জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গাইডলাইন মেনেই বার্থ কম্প্যানিয়নদের লেবার রুমে মজুত রাখা হচ্ছে। এটি ভারত সরকারের ‘লেবার রুম কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ বা লক্ষ্য প্রকল্পের অঙ্গ। বাড়ির লোক থাকায় ডাক্তার-নার্সদের অনেক সুবিধা হয়েছে। লেবার রুমেই বাচ্চা এখন মায়ের দুধ খেতে পারছে। প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর হারও কমেছে। সবচেয়ে বড় কথা সদ্যোজাতর লিঙ্গ নিয়ে বিভ্রান্তিও এড়ানো যাচ্ছে। অবকাশ থাকছে না সন্দেহের। এদেশে প্রসূতির চেক-আপের সময় অনেক কর্পোরেট হাসপাতাল স্বামীদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়। সিজারের সময় অনেক চিকিৎসক-সার্জন রোগীর মনের চাপ কমানোর জন্য গান করেন। প্রসূতিকে গান শোনান। কিন্তু প্রসবের সময় প্রসূতির বাড়ির লোকেদের লেবার রুমে মজুত রাখার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি। এখানেই আধুনিকতায় কর্পোরটকে টেক্কা দিল সরকারি হাসপাতাল। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই লেবার রুমের পরিবেশ ফেরানোর জন্য নার্সদের বেশ কয়েক দফা পরামর্শ দিয়েছে। প্রসূতি ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভাল ব্যবহার। প্রসূতিকে ভরসা জোগানো, মনের জোর বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক কথা বলা। কিন্তু, ‘বার্থ কম্প্যানিয়ন’ এই প্রথম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.