ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: ভরতির দিন থেকেই ভেন্টিলেশনে রোগী। নাকে-মুখে ঢোকানো নল। নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। কার্যত কোমায়। সেই তিনিই ২০ বোতল মিনারেল ওয়াটার খেয়েছেন! তেমনটাই লেখা হাসপাতালের বিলে। ভুতুড়ে সে বিল নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দ্বারস্থ হন সুমিতা পাণ্ডা। গোটা বিল পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মোটা টাকা ফেরত দিতে বলেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
২০২০ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। করোনা তখন মূর্তিমান আতঙ্ক। সুমিতাদেবীর বাবা অমরেন্দ্র পালের ভয়ঙ্কর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মহেশতলার বাসিন্দাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে। কোভিড টেস্ট করাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। প্রথম দিন থেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন তলানিতে। অমেরন্দ্রবাবুর মেয়ের প্রশ্ন, হাসপাতালে প্রবেশের পর থেকেই বাবাকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে মিনারেল ওয়াটার খেত কীভাবে? টানা ১১ দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর গত ২২ জুলাই মারা যান অমরেন্দ্রবাবু। চিকিৎসার বিল দিতে গিয়েই পরিবারের চক্ষু চড়কগাছ। ১১ দিনের বিল হয়েছে ৯ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। বিল নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দ্বারস্থ হন সুমিতা। সেই বিল খতিয়ে দেখতে গিয়েই বিস্মিত রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সদস্যরা। বিলে ২০ বোতল পরিশুদ্ধ পানীয় জলের দাম ধরা হয়েছে।
কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যয় জানিয়েছেন, ভেন্টিলেশনের রোগী মিনারেল ওয়াটার খেলেন কী করে? তার কোনও জবাব দিতে পারেনি ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিলের একাধিক জায়গায় অসঙ্গতি পেয়েছে কমিশন। অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিল আমরা খতিয়ে দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ টাকা নেওয়া হয়েছে। অমরেন্দ্রবাবুর সামান্য লিভার ফাংশন টেস্টের জন্য ২ হাজার ৬২০ টাকা নিয়েছে হাসপাতাল। অথচ বাইরে ওই একই টেস্ট করাতে মাত্র ৭০০ টাকা নেওয়া হয়। রেমডিসেভির মেডিসিনের দাম বাজারে ৪ হাজার টাকা হলেও রোগীর থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বেসরকারি ওই হাসপাতালকে মূল বিল থেকে ৩ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.