গৌতম ব্রহ্ম: কোমরের ব্যথায় টিকতে পারছিলেন না। বারোটা বেজে গিয়েছিল মেরুদণ্ডের এল ৪, এল ৫ কশেরুকার। এই পরিস্থিতিতে সার্জারি করে ব্যথা উদ্রেককারী অংশ বাদ দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু, তাতে যে বিস্তর খরচ। ঝুঁকিও বেশি। সুস্থ হতে মাস দেড়েকের ধাক্কা। সাধারণ গেরস্থ সংসারে এ যে বিলাসিতা! পরিস্থিতি বিচার করে একেবারে নতুন পদ্ধতিতে রোগীকে সুস্থ করল এস এস কে এম এর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ।
বাংলা তো বটেই গোটা দেশেই সরকারি ক্ষেত্রে ব্যথা নিবারণে প্রথম এই অত্যাধুনিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশন (Radiofrequency ablation-RFA) পদ্ধতির প্রয়োগ হল। ফের নজির গড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বাংলা। এখানেই শেষ নয়, আড়াই লক্ষ টাকা খরচ যে অস্ত্রোপচারে, তা হল মাত্রা ২ টাকায়! জানা গিয়েছে, রোগীর নাম যমুনা দাস। বাড়ি হাওড়ার লিলুয়ার চকপাড়ায়। ১৫ মার্চ ৪৫ বছরের এই গৃহবধূকে এস এস কে এম এর পিএমআর বিভাগের প্রধান ডা রাজেশ প্রামাণিকের অধীনে ভরতি করা হয়। ১৭ মার্চ অস্ত্রোপচার হয়। ওইদিনই ছুটি হয় যমুনাদেবীর।
রোগী জানান, “পাঁচ ছয় বছর ধরে কোমরে ব্যথা। এত ব্যথা যে হাঁটা চলা করতে পারছিলাম না। ভারী কিছু তুলতে পারছিলাম না। লোকের বাড়ি কাজ করে খাই। ব্যথার চোটে সেই কাজও ছাড়তে হয়।” রাজেশবাবু জানালেন, মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মধ্যে ফাঁকা থাকে যেখানে এক ধরনের ডিস্ক থাকে, যাকে ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বলে। এই ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায় তখন তাকে ডিস্ক প্রলেপস বলা হয়। যমুনাদেবীর লাম্বার অঞ্চলের ৪ ও ৫ নম্বর ডিস্ক প্রলেপস হয়েছিল। ব্যথা কমানোর জন্যে আরএফএ পদ্ধতির প্রয়োগে এল ৪, এল ৫ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে অকেজো হয়েছে ব্যথার উদ্রেককারি নার্ভগুলো।
এর আগে ভারতের কোনও সরকারি হাসপাতালে এই পদ্ধতির প্রয়োগ হয়নি। সেই হিসাবে পিজি হাসপাতাল পথ প্রদর্শক। যমুনাদেবী এখন সম্পূর্ন সুস্থ। কাজেও যোগ দেবেন কয়েকদিনের মধ্যে। রাজেশবাবু জানালেন, যে যন্ত্রের সাহায্যে যমুনাদেবীকে ব্যথামুক্ত করা হয়েছে তার দাম প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ এত দামী মেশিন সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্যে বরাদ্দ করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.