ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: সংকটজনক রোগীকে অপারেশন টেবিলে তোলা হয়েছে। অ্যানাস্থেটিস্ট তৈরি। কিন্তু রোগীকে অজ্ঞান করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, অচেতন অবস্থায় রোগী শ্বাসপ্রশ্বাসই নিতে পারবেন না, এমনই তাঁর শারীরিক গঠন!
এমন ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বাতিল ছাড়া উপায় নেই। এ যাবৎ সারা বিশ্বে এহেন দু’জন মাত্র মানুষের সন্ধান মিলেছে। আর তৃতীয় জনের খোঁজ পাওয়া গেল কলকাতায়। সাতচল্লিশ বছরের ওই মহিলার ওই বিরল শারীরিক ত্রুটি মেরামত করে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারটি অবশ্য সেরে ফেলেছে হাসপাতাল। ঘটনা হল, সামান্য স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত অপারেশন করাতে গিয়েই মহিলার এই বিচিত্র রোগটি ধরা পড়েছে। আগে তিনি বা বাড়ির কেউ বিষয়টি জানতেনই না। ডাক্তারি পরিভাষায় এই শারীরিক ত্রুটির নাম ফ্যারিঞ্জিয়াল ওয়েব।
পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গাইনোকলজিক্যাল একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল তাঁর। অস্ত্রোপচারের আগে জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া করে নেওয়াই দস্তুর। এই প্রক্রিয়ায় মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয় মুখে। সেখান থেকে একটি বিশেষ গ্যাস বেরোয়। যাঁর অস্ত্রোপচার হবে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় হ্যালোথেন কিংবা আইসোফ্লুরেন জাতীয় সেই গ্যাস। রোগী অচেতন হয়ে যাওয়ার পর অ্যানাস্থেশিওলজিস্ট মুখের মধ্যে একটি ব্রিদিং টিউব পরিয়ে দেন। যাতে অস্ত্রোপচার চলাকালীন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কোনও অসুবিধে না হয় রোগীর। সেখানেই ঘটে বিপদ। সাতচল্লিশ বছরের সোনালী গুহ (নাম পরিবর্তিত) নিশ্বাসের রাস্তাটাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। মাস্ক পরাবেন কী করে? ডাক পড়ে ইএনটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজার। চিকিৎসকের কথায়, গলার ভিতরের অ্যানাটমিটা অদ্ভুত ছিল। যেখান থেকে টিউব পরাবে, সেই শ্বাসনালির রাস্তাটা খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। ফাইবার অপটিক ক্যামেরা দিয়ে চিকিৎসক দেখেন, গলার শ্বাসনালির জায়গাটায় পর্দার মতো আস্তরণ।
চিকিৎসকের কথায়, “জালের মতো ছিল জায়গাটা। ভিতরটা দেখা যাচ্ছিল না।” চিকিৎসক জানিয়েছেন,এটা ডেভলপমেন্টাল অ্যানোমেলি। জন্মের সময় থেকেই সমস্যা। কিন্তু এতদিন কোনও সমস্যা দেখা না যাওয়ায় ওই মহিলা টের পাননি। সাধারণত বাচ্চাদের এমনটা দেখা যায়। অ্যাডাল্ট ফ্যারিঞ্জিয়াল ওয়েব বিরলের মধ্যে বিরলতম। সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত দুটো কেস নথিভুক্ত রয়েছে। ডা. শান্তনু পাঁজার বক্তব্য, “এই রোগীকে কখনও জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া করে অজ্ঞান করা যেত না। ট্র্যাকিওস্টমি করতে হত।” কোঅবলেটর পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে সমস্যা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.