স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের চোখরাঙানিকে তোয়াক্কা না করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণকে রুখে দিয়ে সবুজায়ন বাস্তবায়িত করে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০ শহরের মধ্যে জায়গা করে নিল কলকাতা৷ পিছনে ফেলে দিল দেশের রাজধানী দিল্লি, বাণিজ্য নগরী মুম্বই ও দক্ষিণের প্রাণকেন্দ্র চেন্নাইকে৷ মেক্সিকোয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সম্মেলনে শুক্রবার দেশের একমাত্র মহানগর হিসাবে দূষণ প্রতিরোধী সেরার শিরোপা অর্জন করেছে কলকাতা৷ সৌজন্যে কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের পদ্ধতিগত সাফল্য৷ যা লক্ষাধিক আধুনিক শহরকে পিছনে ফেলে সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে৷ কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এদিন রাতে বলেন, “সম্মান প্রাপ্তির বিষয়টি জেনেছি৷ কলকাতার এই গর্বে আমরা আপ্লুত৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও অনুপ্রেরণা মেনে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কলকাতা পুরসভা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে৷ যা দেশের মধ্যেও আজ মডেল৷ এখন রজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এলাকাতেও এই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার৷” তবে কলকাতার এই বিশ্বসেরা সম্মান প্রাপ্তির লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না বলেই মনে করছেন রাজ্যের পুরকর্তারা৷ কারণ এই ‘সিসি-৪০ মেয়রস সামিট’-এ বিশ্ব সেরা দশের তালিকায় রয়েছে সিডনি, মেলবোর্ন, প্যারিস, পোর্টল্যান্ড, ইয়োকোহামার মতো প্রথম সারির শহর৷ তাঁদের সঙ্গে একই আসনে তিলোত্তমা মহানগরীর সম্মান পাওয়া নিয়ে গর্বিত কলকাতা মেয়র-পরিবেশমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই কলকাতাকে ‘গ্রিন ক্যালকাটা, ক্লিন ক্যালকাটা’ স্লোগান দিয়ে দূষণ মুক্ত শহর গড়ার নির্দেশ দেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনে শহরকে সবুজ করার অভিযানে নেমে বিরল এই সম্মান ছিনিয়ে আনলেন মেয়র তথা পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷
মেক্সিকোর এই সম্মেলনে গিয়েছেন রাজ্যের পুরসচিব তথা কেএমডিএ-এর সিইও ওঙ্কার সিং মিনা এবং উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবও৷ এদিন মিনা জানিয়েছেন, “প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ১০০ শতাংশ বাড়ি থেকে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ থেকে তার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে বাজারে নতুন আঙ্গিকে বিক্রি করাটাই রাজ্যের মূল লক্ষ্য৷ কমপ্যাক্টর মেশিনের পাশাপাশি এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন কাগজ কুড়ানিরাও৷” টেলিফোনে মেক্সিকো থেকে দিলীপ যাদব বলেন, “বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন করার জন্য সম্মেলনে বিশেষ সম্মান পেয়েছে উত্তরপাড়াও৷” শহর হিসাবে কলকাতার পাশাপাশি কেএমডিএ এলাকার হুগলির ছ’টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি পুরসভাও বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ও সার তৈরির প্রকল্প করার জন্য এই সম্মেলনে প্রশংসিত হয়েছে৷ উদ্যোক্তাদের তরফেও জানানো হয়েছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার পাশাপাশি তার সঠিক প্রয়োগই এই শিরোপা অর্জনের মাপকাঠি ছিল৷ যে মাপকাঠি প্রকল্প ভিত্তিক বিচারে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ সফল৷ দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতার ময়লার ভ্যাটগুলো ছিল খোলামেলা৷ দিনের বেলাতেও নাকে আঙুল দিতে যাতায়াত করতে হত৷ অনেক সময় অপরিষ্কার এই ময়লার ভ্যাটগুলো থেকে বেরোত বিষাক্ত মিথেন গ্যাস৷ ধীরে ধীরে কম্প্যাক্টর স্টেশন বসানোর ফলে আমূল বদলে গিয়েছে এই ময়লার ভ্যাটগুলো৷ ফলে কমেছে দূষণের মাত্রা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.