অর্ণব আইচ: ‘ধনুকের’ বাণ আগুন ছড়াবে। পাহাড়ের দূর প্রান্তে ছুটে যাবে গোলা। অথবা মরুভূমির প্রান্তরে এই ‘ধনুক’ থেকেই ছিটকে যাওয়া আগুন এক লহমায় ঘায়েল করবে দুশমনকে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের উপর হামলার পরপরই শত্রু ও জঙ্গিদের নিকেশ করতে আধুনিকতম স্বয়ংক্রিয় বন্দুক তথা কামান ‘ধনুষ’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেনাবাহিনী। আর এই আধুনিক ‘ধনুষ’-এর যে ব্যারেল বা নল থেকে বেরোবে আগুনের গোলা, তা তৈরি হবে খাস কলকাতাতেই। সেনা সূত্রে খবর, পুলওয়ামার ঘটনার দিন চারেকের মধ্যেই অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড বা OFB কে ‘ধনুষ’ তৈরির সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
কলকাতায় ওএফবি-র দফতরে পৌঁছেছে সেই ‘বাল্ক প্রোডাকশন ক্লিয়ারেন্স’ বা বিপিসি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ১১৪টি
‘ধনুষ’ তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ওএফবি। সেনাদের দাবি, এই প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে লম্বা রেঞ্জের এই বন্দুক সেনাবাহিনীর এক কর্তা জানান, কাশ্মীরে পুলওয়ামার ঘটনার পরপরই এই ধরনের আধুনিক বন্দুক তৈরির সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শত্রুদেশের সেনাই হোক অথবা পাকিস্তানি জঙ্গি, তাদের শেষ করার জন্য ‘ধনুষ’—এর মতো বন্দুক যথেষ্ট শক্তিশালী অস্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে।
‘ধনুষ’ তৈরি হওয়ার পরই বোঝা যাবে এর উপযোগিতা। সেনা সূত্রে খবর, কাশ্মীরের সিয়াচেনের মতো উঁচু জায়গায় প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে অথবা রাজস্থানের সমতল মরুভূমিতে প্রচণ্ড গরমে অতি সহজে কাজ করতে পারবে ‘ধনুষ’। সেনা ও ওএফবি সূত্রে জানা গিয়েছে, শত্রুসেনা ও জঙ্গি নিকেশ করার জন্য কলকাতায় বসেই এই আধুনিক ‘১৫৫ এমএম ৪৫ ক্যালিবার আর্টিলারি গান’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। শত্রুর দিকে লক্ষ্য স্থির করার জন্য এই বন্দুকে রয়েছে ‘নেভিগেশন বেসড’ পদ্ধতি। পাহাড় বা সমতলে রুক্ষ যে কোনও জায়গায় এই বন্দুক বা কামান সহজে বসানো যায়। ‘ধনুষ’-এ থাকা বিশেষ পদ্ধতিতে দিনের আলো বা রাতের অন্ধকার, যে কোনও সময় একইরকমভাবে শত্রুপক্ষের দিকে সহজে নিশানা করা যায়। গোলা চালানো যায় ঘাঁটি বা পাথরের আড়াল অথবা বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের দিকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ইতিমধ্যেই রয়েছে ‘ন্যাটো ১৫৫ এমএম’ গোলা। এই গোলাই ‘ধনুষ’ থেকে ছুটে যাবে শত্রুদের দিকে। আবার অন্য ধরনের গোলাও ব্যবহার করা যাবে আধুনিক এই কামানে।
[টাকা দিতে নারাজ বাবা, অভিমানে প্রকাশ্যে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা ছেলের]
অন্য কামানের সঙ্গে ‘ধনুষ’-এর তফাৎ রয়েছে। বৈদ্যুতিন পদ্ধতির দিক থেকে এই কামানটিকে আরও আধুনিক করা হয়েছে। কামানের লক্ষ্য যাতে না ফসকায় ও গোলা নষ্ট যাতে না হয়, প্রযুক্তিগতভাবে সেদিকে বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে ব্যারেল থেকে ছুটে যাওয়া গোলার গতিও। ওএফবি সূত্রে বলা হচ্ছে, কলকাতায় ইছাপুরের রাইফেল ফ্যাক্টরি কারখানায় ‘ধনুষ’-এর ব্যারেল তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে। অন্যান্য অংশ তৈরি হবে দেশের বিভিন্ন কারখানায়। জোড়া লাগানোর পর পরীক্ষামূলক ‘ফায়ারিং’ হবে। এর পর শত্রু ও জঙ্গি দমনে কাশ্মীর, উত্তর সিকিম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সেনাঘাঁটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হবে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.