অর্ণব আইচ: কলকাতায় মিলল জাল ভিসা (Fake Visa) চক্রের ‘কারখানা’র সন্ধান। শহরের একটি বাড়িতে বসেই তৈরি করা হচ্ছিল সারা দেশের বহু যুবক-যুবতীর জাল ভিসা। বেশিরভাগ জাল ভিসাই আমেরিকার (America)। এ ছাড়াও মধ্য প্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের জাল ভিসাও তৈরি করত এই চক্রটি। এই চক্র চালানোর অভিযোগে রবিবার মেটিয়াবুরুজে তল্লাশি চালিয়ে এক যুবতীকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। যদিও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রেশমা পারভিন নামে ওই যুবতীর দাবি, তিনি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করেই তৈরি করতেন জাল ভিসা।
এই চক্রের পান্ডা রোহন আগরওয়াল পুরো চক্রটি চালাতেন বিভিন্ন যুবক-যুবতীর সাহায্যে। সম্প্রতি আমেরিকার রেস্তোরাঁয় চাকরি দেওয়ার নাম করে জালিয়াতি চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। কানপুরের বাসিন্দা চাকরিপ্রার্থী এক যুবক ও এক যুবতী কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগপত্রেই ছিল রেশমার নাম। জালিয়াতির তদন্ত করেই এই মাসের প্রথমে রোহন আগরওয়াল ও তাঁর সঙ্গী মহম্মদ রিজওয়ানকে লালবাজারের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন।
ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একাধিক পাসপোর্ট ও জাল ভিসা। সেই জাল ভিসার তদন্ত চালিয়েই গোয়েন্দারা হদিশ পান রেশমার। গত কয়েক মাসে বিপুল সংখ্যক জাল ভিসা তৈরি হয়েছে বলে দাবি রেশমার। সেই সূত্র ধরেই সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শতাধিক যুবক-যুবতীকে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। পুলিশ এই তথ্য যাচাই করছে। রেশমাকে জেরা করে মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা সিকন্দরের নাম সামনে এসেছে। ওই ব্যক্তিরও সন্ধান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, মার্কিন রেস্তোরাঁয় চাকরি দেওয়ার নাম করে চাকরিপ্রার্থীদের পাসপোর্ট নিয়ে নিজেদের কাছে রাখত রোহন ও তার সঙ্গীরা। ওই পাসপোর্টগুলি দেখেই তৈরি করা হয় জাল ভিসা। তার জন্যই রোহন কয়েকমাস আগে নিয়োগ করেন রেশমাকে। রেশমা এক বন্ধুর মাধ্যমে যোগাযোগ করেন রোহনের সঙ্গে। ওয়াটগঞ্জের একটি অফিসে রেশমার ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে হবে। তাঁকে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রেশমার মেটিয়াবুরুজের বাড়িতে রোহন কম্পিউটার ও প্রিন্টার পাঠিয়ে দেয় সিকন্দর নামে ওই যুবকের সাহায্যে। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রেশমার দাবি, প্রত্যেককদিন গড়ে একটি বা দু’টি করে জাল ভিসা অনলাইনে পাঠাতেন রোহন। তার প্রিন্ট বের করতেন রেশমা।
রেশমাকে জাল রবার স্ট্যাম্প দিয়েছিলেন রোহন। রেশমার কাজ ছিল সেই জাল ভিসার উপর জাল রবার স্ট্যাম্পের ছাপ দিয়ে সই করা। বিভিন্ন নামে রেশমাকে সই করতে হত। প্রত্যেকদিন এসে তাঁর কাছ থেকে সিকন্দর সেই জাল ভিসা নিয়ে পৌঁছে দিত রোহনের কাছে। এ ছাড়াও শারদ ও অনন্যা নামে আরও দু’জনের নাম উঠে এসেছে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে। জাল চক্রে বাকি অভিযুক্তদেরও ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.