সুলয়া সিংহ: মহালয়ার আগে থেকেই এবার পুজো শুরু। মণ্ডপে মণ্ডপে জনজোয়ার। উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে সর্বত্রই এক ছবি। আপনিও যদি দক্ষিণ কলকাতার (Kolkata Durga Puja) প্যান্ডেল হপিংয়ের পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই প্রতিবেদনে রইল ৫টি পুজোর সন্ধান।
চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন: প্রতি বছরই এই পুজোয় দর্শনার্থীর ঢল নামে। রাতভোর জমজমাট থাকে ভবানীপুর চত্বরের এই মণ্ডপ। এবারের থিম ‘বাক্সবদল’। শিল্পী মানস দাসের ভাবনায় সেজেছে গোটা মণ্ডপ।
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির জমানায় ভেঙে চুরমার একান্নবর্তী পরিবার। সংসারে ভাঙন ধরলে ধীরে ধীরে আলাদা হতে থাকে লেটার বক্স, উনুন, বাথরুম থেকে ঠাকুরঘর। এরপর পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটির মায়াকে পদদলিত করে গড়ে ওঠে গগনভেদী আবাসন। তবে এর মধ্যেও পুজো এলে সেই ভাঙন পর্ব কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে গোটা পরিবার একসঙ্গে মেতে ওঠে উৎসবে। দেবীদুর্গাই যেন সব মনোমালিন্য দূরে সরিয়ে দেন কয়েকটা দিনের জন্য। সেই ভাবনাই ফুটে উঠেছে। কালের নিয়মে বাক্সবদল হয়, তবে সে বাক্সে বন্দি স্মৃতি থেকে যায় অমলীন।
বকুল বাগান: ভবানীপুর এলাকার আরও একটি জনপ্রিয় পুজো বকুল বাগান। এবার শিল্পী অদিতি চক্রবর্তীর ভাবনায় এখানে ধরা পড়েছে একটুকরো বারাণসী। মনিকর্নিকা শ্মশান ঘাট থেকে গঙ্গা আরতি, বিশ্বখ্য়াত বেনারসী শাড়ি থেকে গঙ্গায় নৌকা বিহার, ভারতের প্রাচীনতম শহরের নানা ছবি ফুটে উঠেছে এই মণ্ডপে।
এবারের থিম ‘মোক্ষ’। জীবনের মোহমায়া, পুনর্জন্মের আকাঙ্ক্ষা কাটিয়ে মোক্ষলাভ করার বাসনা বলতে বারাণসীর কথাই মনে পড়ে। হাজারো মানুষ কাশীবাসী হয়েই মুক্তির পথ খোঁজেন। সেই বিষয় ভাবনাই জুড়ে গিয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজোয়। দেবী দুর্গা এখানে জোড়া সিংহে অধিষ্ঠাত্রী। মুক্তির দিশারী।
পল্লি উন্নয়ন সমিতি, পশ্চিম পুঁটিয়ারি: কলকাতার পুজোর থিমের জাঁকজমকের ভিড়ে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে এই পুজোটি। তাই পুজো পরিক্রমায় তালিকায় এই পুজোকে রাখতেই পারেন এবার। এবছর গেলে সেখানে শিব-পার্বতীর ‘মিলনে’র সাক্ষী থাকবেন।
পুরানে আমরা মহাদেব ও পার্বতীর বিয়ের নানা কাহিনি শুনেছি। সেই বিষয় নিয়েই এবার মণ্ডপ সাজিয়েছেন শিল্পী সোমনাথ তামলি। শুধু মণ্ডপসজ্জাই মুগ্ধ করবে, তা নয়, গম্ভীরার লাইভ পারফরম্যান্সও দেখা যাবে।
অবসর: ভবানীপুর এলাকার অবসরের পুজোয় রাজ করেছেন শহরের একাধিক নামী-দামি শিল্পী। এবার এখানের ভাবনা ‘শূন্য তবু শূন্য নয়।’ সৃজনে শিল্পী শিব শংকর দাস।
ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার পথে কি অতীত মুছে যায়? ফেলে আসা দিনগুলোকে কি অস্বীকার করা যায়? না, কারণ অতীতের উপরই তো দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ। তাই একটা সময় যা শূন্যে পরিণত হয়, তা কিন্তু আসলে শূন্য নয়। সেখানেও অতীত স্মৃতির ভিড়। কলকাতার অটো, ট্যাক্সি থেকে রবীন্দ্রনাথ, এমনই চেনা ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে শিল্পী তাঁর ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
৬৬ পল্লি: কালীঘাট চত্বরের এই পুজো এবার সাজিয়ে তুলেছেন শিল্পী দীপাঞ্জন দে। থিমের পোশাকি নাম দুর্গার মাটি মাটির দুর্গা। পতিতা, মেথর, মুচি-সহ ন’টি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ছাড়া এ সমাজ যেন অচল। কথিত আছে, দুর্গাপুজোর জন্য মাটি আসত সেই সব পরিবারগুলি থেকে। আর উনুনে পুড়িয়ে তৈরি হত মায়ের মুখের ছাঁচ। আগুনে পুড়ে যেমন মায়ের মুখ রূপ পায়, তেমনই সমাজের ওই মানুষগুলোকে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এগিয়ে চলতে হয়।
এবার এই পুজোর আরও একটি আকর্ষণ হল এর প্রতিমা। স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী পার্বতী দাস বাউলের আঁকা ছবির আদলে তৈরি হয়েছে ৬৬ পল্লির প্রতিমা। মহালয়ায় যার চক্ষুদান নিজেই করেছেন পার্বতী বাউল। পুজোয় ঘুরে দেখতেই পারেন এই মণ্ডপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.