কৃষ্ণকুমার দাস: পুনর্জন্ম ও পুনর্ব্যবহার- পুজোর কলকাতায় (Kolkata Durga Puja) এই দুই অভিনব থিমের লড়াইয়ে জমজমাট শহরের দক্ষিণের যোধপুর পার্ক। মরণোত্তর চক্ষুদান করে একজন প্রয়াত ব্যক্তি যে দুজন দৃষ্টিহীনের মধ্য়ে পুনরায় জন্ম নিতে পারেন, সেটাই থিম যোধপুর পার্ক শারদীয়া উৎসব কমিটির।
মৃতের অঙ্গদানে অন্য়ের মধ্য়ে বেঁচে থাকার প্রয়াসকে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ইউনেসকোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া বাঙালির সেরা উৎসবকেই বেছে নিয়েছেন শিল্পী বাপাই সেন। পাশের ৯৫ পল্লিতে শিল্পী ভবতোষ সুতারের হাত ধরে একবার ব্যবহার করে জঞ্জালের স্তূপে ছুড়ে দেওয়া সামগ্রী নিয়ে গড়ে উঠছে মণ্ডপ। থিম- ‘বাতিল নয়, ব্যবহার’। সোজা কথায়, ‘পুনর্ব্যবহার’ থিম দূষণের নিশ্বাস থেকে বিশ্বকে বাঁচার নতুন ঠিকানা দিতে চাইছে শিল্পীর হাত ধরে। দুই পুজো মণ্ডপই এবছরও মহালয়ার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে দ্বারোঘাটন হওয়ার কথা।
যাদবপুর থানা ও সেলিমপুরের মাঝের রাস্তা দিয়ে যোধপুর পার্কে ঢুকলেই দূর থেকে নজরে পড়বে উঁচু মণ্ডপের বিশাল স্তম্ভের সারি। প্রতিটি স্তম্ভের শরীরজুড়ে নানা মাপের জীবন্ত চোখ জ্বলজ্বল করছে। শুধু তাই নয়, চোখের ভিতর যে শিরা-উপশিরা ও রক্তের জালিকা থাকে সেটিও জীবন্ত হয়েছে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। আরও কাছে গেলে ফুটে উঠবে চোখের সমস্ত অডিটরি নার্ভ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রকট করে, মস্তিস্কে দৃশ্যবস্তুর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। মানুষ খুঁজে পাবেন তাঁর শরীরের মহামূল্যবান সামগ্রী, একজোড়া চোখকে। মণ্ডপ নিয়ে পুজোর সম্পাদক সুমন্ত্র রায়ের কথায়, ‘‘মানুষ মৃত্য়ুর পরে তাঁর শরীরের মহামূল্যবান সামগ্রী অনায়াসেই কীভাবে কোনও কষ্ট ছাড়াই দান করতে পারেন তা তুলে ধরা হয়েছে।’’ শিল্পী বাপাই সেনের দাবি, ‘‘জীবিত অবস্থায় শরীরে সুচ ফোটাতে গেলেও ব্যথা লাগে, কষ্ট হয়। কিন্তু মৃত্য়ুর পরে দুটো চোখ দান করলে তা তুলে নিলে শরীরে কোনও অনুভূতি পান না প্রয়াত। অথচ অন্য দুই শরীরে তাঁর দান করা চোখ দিয়ে পুনরায় বেঁচে থাকতে পারেন।’’ পুনর্জন্ম-এর থিম সং লিখেছেন শুভজিৎ হাজরা ও সুরকার দেবতনু দত্ত, গেয়েছেন মৌসুমী দাস।
মহানগরের যে কোনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি হয়ে যাওয়ার পরেও মাসের পর মাস তার ফ্লেক্স থাকছে। উৎসবের নামে শহরে ঢেকে যাচ্ছে আবর্জনার স্তূপে। কিন্তু এই বর্জ্য ও বাতিল সামগ্রী দিয়েই শিল্পী ভবতোষ সুতার ৯৫ পল্লির থিম বানিয়েছেন, ‘বাতিল নয় ব্যবহার’। শিল্পীর কথায়,‘‘শুরু করেছি যোধপুর পার্কে মাধুকরী করে পেয়াঁজের খালি বস্তা থেকে, শহরের নানা ফ্লেক্স সংগ্রহ করে মণ্ডপ করছি। গতবছর যে মণ্ডপে পুজো হয়, তার লোহার কাঠামো ও সরঞ্জাম ব্যবহার করেছি। বাতিল সামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করে বিশ্বকে ভারমুক্ত করার চেষ্টা করছি।’’ পুজোর সভাপতি রতন দে জানিয়েছেন, ‘‘ফাইবার ও মাটির সম্মিলিত রূপে অনিন্দ্যসুন্দর মাতৃমূর্তি এবছরও দর্শকদের বাড়তি আকর্ষণ হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.