Advertisement
Advertisement

সময়মতো সিপিআর দিলে বাঁচানো যেত অনিকেতকে

সময়মতো জোটেনি একটা অ্যাম্বুল্যান্সও।

Kolkata cricketer could have been saved
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:January 16, 2019 8:36 am
  • Updated:January 16, 2019 8:36 am  

গৌতম ব্রহ্ম: একটা অ্যাম্বুল্যান্সও জোটেনি। ট্যাক্সিতে চাপিয়ে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় পাইকপাড়া ক্লাবের তরুণ ক্রিকেটার অনিকেত শর্মাকে। বাকিটা মর্মান্তিক।

সময়মতো সিপিআর (কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিলে হয়তো অকালে ঝরত না একুশের তরতাজা যৌবন। আরজি করের এমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারদের গলায়ও সেই আক্ষেপের প্রতিধ্বনি। বললেন, দুর্ঘটনার পর অনিকেতের বুকে, হাত-পায়ে ম্যাসাজ করার চেষ্টা করেছিল সতীর্থরা। জ্ঞান ফেরাতে চোখে-মুখে ছেটানো হচ্ছিল জল। কিন্তু অনিকেতের হৃদযন্ত্র পুনরায় সচল করতে দরকার ছিল টানা সিপিআর। তা দেওয়া যায়নি। আরজি করের এমার্জেন্সিতে যখন অনিকেতকে নিয়ে আসা হয়, তখন সব শেষ।

Advertisement

[অনুশীলন চলাকালীন শহরে তরুণ ক্রিকেটারের মৃত্যু]

খেলার মাঠে প্রাণ হারানোর ঘটনা নতুন নয়। অনিকেতের আগে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০০৩ সালের ২৬ জুন। ফ্লান্সে কনফেড কাপে ক্যামেরুনের ভিভিয়ান ফো মাঠেই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে মারা যান। ২০০৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুর কান্তিভারা স্টেডিয়ামে গোলকিপার সুব্রত পালের সঙ্গে মামুলি ধাক্কায় পড়ে যান ডেম্পোর স্ট্রাইকার ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র। টিভিতে দেখা যায়, নাক বন্ধ না করেই মুখ দিয়ে জুনিয়রকে বাতাস দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। কেউ আবার মাথায় জল ঢালছেন। জুনিয়রকে বাঁচানো যায়নি। অথচ, ২০০৩ সালে এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে জাকার্তায় ইস্টবেঙ্গলের দেবজিৎ ঘোষের হৃদস্পন্দন বন্ধ হলেও টিমের কর্মকর্তা চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত সিপিআর দিয়ে দেবজিৎকে বাঁচিয়ে দেন।

এক যাত্রায় পৃথক ফল হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। পার্থক্য গড়ে দিয়েছে তিন অক্ষরের একটি শব্দ সিপিআর। অনিকেতের ক্ষেত্রেও বুকে, হাতে, পায়ে ম্যাসাজ হয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনে সিপিআর দেওয়া হয়নি। অন্তত এমনটাই ধারনা ডাক্তারদের। তাঁদের মত, খেলার মাঠে বিশেষত ফুটবলে জোরালো আঘাতে হৃদযন্ত্র থেমে যেতে পারে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে বা বজ্রপাতেও বন্ধ হতে পারে হার্ট। আবার দুর্ঘটনার পর মুখের ভিতর রক্ত, বমি জমে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশিষ্ট ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত গোস্বামী জানালেন, “হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হলে তিন মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলির অপমৃত্যু ঘটতে থাকে। এই তিন মিনিটের মধ্যে সিপিআর দেওয়া শুরু করতে হয়। আশপাশের মানুষকেই এই কাজ করতে হয়। অনিকেতের ক্ষেত্রে বোধহয় তা হয়নি।”

পিজি হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজেশ প্রামাণিক জানালেন, “হাইপারট্রপি কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ (এইচসিএম) থাকলে নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যে থাকা খেলোয়াড়ও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। অনিকেতের হার্টেও এইচসিএম ছিল কী না দেখা উচিত। এই রোগ বহু তরুণ ক্রীড়াবিদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এই রোগে হৃদপেশি দুর্বল হয়ে যায়। আচমকা ছোবল মারে হৃদরোগ। অতিরিক্ত পরিশ্রমেই হয় এমনটা। রাজেশবাবুর মত, হৃদযন্ত্র ছাড়া অন্যত্র পেশির সমস্যা হলে পক্ষাঘাত হতে পারে। কিন্তু মৃত্যু হবে না। মোহনবাগান ক্লাবের স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. প্রতিম রায় এই দুর্ঘটনার জন্য অবশ্য ছোট ক্লাবগুলির পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়া আর কটা ক্লাবের স্পোর্টস মেডিসিনে ডিগ্রিধারী নিজস্ব ডাক্তার আছে? আমরা নিয়মিত খেলোয়াড়দের রক্ত পরীক্ষা করাই। শারীরিক সক্ষমতা মাপি। অন্যদিকে ছোট ক্লাবগুলিকে দেখুন। কোনও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই নেই।” প্রতিমবাবুর অভিজ্ঞতা, অনুশীলন চলাকালীন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সিপিআর দেওয়ার লোক নেই। খেলোয়াড়দের কার্ডিয়াক স্ক্রিনিংও হয় না ঠিকমতো।

[বাড়ছে ‘সাইবার যুদ্ধে’র আশঙ্কা, নয়া এজেন্সি গঠন করতে চলেছে সেনা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement