কৃষ্ণকুমার দাস: মধ্যবিত্ত নাগরিকদের পেটের অসুখ বন্ধে এবার মহানগরের সমস্ত ফুটপাথের খাবার বিক্রিতে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা চালু করছে কলকাতা পুরসভা। তেলেভাজা, চপ-বেগুনি, ঝালমুড়ি, কুলফি বরফ, ভেলপুরি, পাপড়ি চাট, দইবড়া, ছাতুর শরবত, মাংসের ঘুগনি, কচুরি-আলুর দম, এগরোল-চাউমিন, ফুচকা-ভেলপুরির মতো শতাধিক খাবার তৈরি ও বিক্রির সময় নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করেছে পুরসভা।
[ আরও পড়ুন: ‘মাথা উঁচু করে বাঁচব’, সব্যসাচী দত্তের ভিডিও বার্তায় জল্পনা ]
প্রথম দফায় শহরের ১৬ হাজার স্ট্রিট-ফুড বিক্রেতাকে বিশেষ ট্রেনিং দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। মহানগরের সমস্ত স্ট্রিট-ফুড বিক্রেতাকে শেখানো হবে, কাঁচামাল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ থেকে খাবার পরিবেশনে কী ধরনের ‘হাইজিনিক’ পোশাক পরতে হবে। খিচুড়ি-ইলিশ, দই চিঁড়ে, ছাতুর শরবত, বেলের শরবত, রসবড়ার মতো জিভে জল আনা খাবার তৈরিতে বিন্দুমাত্র ‘আন-হাইজিনিক’ হলেও যে পেটখারাপের মহাযজ্ঞ শুরু হবে, তা স্বীকার করছেন বিক্রেতারাও। তাই ‘জিভে প্রেম করে যেই জন’ ব্যক্তিদের শরীরের অন্তঃপুরে রান্না করা খাবারগুলি পৌঁছে যাতে কোনও অশান্তি বাঁধাতে না পারে, হাসপাতালে ভর্তি হতে না হয়, সেই লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চায় পুরসভা। উল্লেখ, সপ্তাহ কয়েক আগে একদিন রাতেই হাতিবাগানে রাতের খাবার বিক্রির সময় স্ট্রিট-ফুড কতটা ‘হাইজিনিক’ তা সরজমিনে দেখতে ফুটপাথে হানা দিয়েছিলেন স্বয়ং ডেপুটি মেয়র।
[ আরও পড়ুন: অর্থ দপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনও নিয়োগ নয় পুরসভায়, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্দেশ নবান্নের ]
স্ট্রিট ফুড নিয়ে যে সমস্ত বিধিনিষেধ পুরসভা জারি করতে চলেছে তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হল, ফুটপাথের প্রত্যেক খাবার বিক্রেতার হাতে গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক করা। মশলামুড়ির মতো মুখরোচক খাবার তৈরির জন্য যে সরষের তেল ব্যবহার করা হয়, তার গুণমানও বেঁধে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরে। এমনকী মাটির ভাঁড়ে চা, হাই কোর্ট পাড়ার শিঙাড়া-জিলিপি, কাঁঠি রোল থেকে শুরু করে মেট্রো গলিতে ট্রলি করে বিক্রি করা ইডলি-ধোসাকেও ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ করার নিদান দেবে পুরসভা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও রাষ্ট্রসংঘের যৌথ উদ্যোগে ব্যাংককে এশিয়া স্ট্রিট ফুড কনফারেন্স থেকে ফিরে শহরের ফুডপাথের
খাবারকে আরও ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ করার জন্য রবিবার একগুচ্ছ ভাবনার কথা জানান ডেপুটি মেয়র।
[ আরও পড়ুন: বনগাঁ মামলার নিষ্পত্তি, ১২ দিনের মধ্যে পুরসভায় আস্থা ভোটের নির্দেশ হাই কোর্টের ]
ব্যাংককের ওই সম্মেলনে কলকাতা পুরসভার ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং রেস্তরাঁর খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নজরদারির বিষয়টি বিশেষ প্রশংসিত হয়। সম্মেলনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে গৃহীত সিদ্ধান্তের সূত্রগুলি ধরে ফুডপাথের খাবারকে আরও স্বাস্থ্যসম্মত করতে পথে নামবেন অতীন। তাঁর কথায়,“ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা যেমন উৎসে গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করেছি। তেমনই শহরের পেটখারাপের অন্যতম ঠিকানা ফুটপাথের খাবারকে এবার সম্পূর্ণ ‘হাইজিনিক’ করতে চায় পুরসভা।” ধর্মতলার এসপ্ল্যানেড পোস্ট অফিসের ডানদিকে জেমস হিকি সরণি, যাকে সবাই ডেকার্স লেন বলেই চেনেন। ডেকার্সের সঙ্গে বিবাদি বাগ-ফেয়ারলি প্লেসের ফুটপাথের কয়েক হাজার খাবার বিক্রেতাকে প্রথম দফায় এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
[ আরও পড়ুন: বেহালার মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের রহস্যমৃত্যু, প্রেমিকার বাড়িতে মিলল দেহ ]
শিয়ালদহ, শ্যামবাজার, হাতিবাগান, হাজরা, ভবানীপুর, আলিপুর, গড়িয়াহাট, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, গড়িয়াতেও যাঁরা ফুটপাতে নানা মশলাদার খাবার বিক্রি করেন, তাঁদেরও দফায় দফায় ‘হাইজিন’-এর পাঠ দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। তবে এমন ‘খাবার-সংস্কার’ করার আগে কলকাতার শাসকদলের সার্বিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে বিশেষ জরুরি তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। তবে স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, মেয়র, ডেপুটি মেয়রের মতো শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বৈঠকে যে হাজির থাকেন তা প্রশংসিত হয়েছে এবারে ব্যাংককের বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.