অর্ণব আইচ: অ্যাপ ক্যাব নিয়ে ছিনতাই শহরে। আর ছিনতাইয়ের গয়না বন্ধক দিয়ে সেই টাকায় দিনের পর দিন ফুর্তি অ্যাপ ক্যাব চালক ও তার সঙ্গীর। শেষে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় এক মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাই করেই বিপাকে পড়ল তারা। সাদা রঙের গাড়ি আর নেমপ্লেটের কয়েকটি নম্বরের সূত্র ধরেই রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল অ্যাপ ক্যাব চালক মিলন পাইক ও তার সঙ্গী দীপেন্দ্র চক্রবর্তী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হল শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিনতাই হওয়া সোনার গয়না ও মোবাইল ফোন।
বাইকে করে এসে ছিনতাই শহরে নতুন কিছু নয়। দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা ওই অ্যাপ ক্যাব চালক ও তার সঙ্গী দু’জন মিলে তাদের গাড়ি নিয়েই শুরু করেছিল ছিনতাই। সকাল অথবা সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে তারা ‘টার্গেট’ করত মূলত প্রৌঢ়া বা মহিলাদের। একা প্রৌঢ়াকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলে গাড়ি নিয়ে তাঁদের কাছে গিয়ে দাঁড়াত। জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে চালকের সঙ্গী দীপেন্দ্র কারও হাত থেকে মোবাইল আবার কারও গলা থেকে হার ছিনতাই করেই বাড়িয়ে দিত গাড়ির গতি। চোখের পলকে উধাও হয়ে যেত তারা। গত ১৭ আগস্ট রিজেন্ট পার্কের লাফিং ক্লাবের কাছেও ঘটে একই ঘটনা৷ বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি করে দুই দুষ্কৃতী প্রথমে এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। কিন্তু মহিলা ব্যাগটি চেপে ধরতেই ছক বদলে ফেলে তারা। গলা থেকে সোনার হার ছিনতাই করার চেষ্টা করে তারা। মহিলা তাতেও বাধা দেন। মহিলাকে কিছুদূর হেঁচড়েও নিয়ে যায় তারা। শেষে সোনার হারের কিছুটা অংশ নিয়েই পালায় দুষ্কৃতীরা।
তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে গাড়ির রং সাদা। গাড়ির মডেল সম্পর্কেও জানতে পারে পুলিশ। মহিলা গাড়ির নম্বরও সম্পূর্ণ বলতে পারেননি। যে নম্বরগুলি বলতে পেরেছিলেন, সেগুলি ঘেঁটেই গাড়ির নম্বর সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেই সূত্র ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু মেলেনি গাড়ির হদিশ। এবার আলিপুরের মোটর ভেহিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, গাড়িটি সোনারপুরেরই। একটি নামী গাড়ি নির্মাতা সংস্থাই গাড়িটিকে ‘ফিনান্স’ করেছে। শেক্সপিয়র সরণিতে ওই সংস্থার অফিস থেকে পুলিশ আধিকারিকরা দু’টি ঠিকানা পান। একটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর ও অন্যটি যাদবপুর এলাকার। গাড়ির মালিকের বাড়ি নরেন্দ্রপুরে। তাঁর গাড়ি একটি বিশেষ সংস্থার অ্যাপ ক্যাব। মালিকের নম্বরে ফোন করে তাঁরা চালক মিলন পাইকের ঠিকানা জানতে পারেন। তাকে ধরে জেরা করতেই গাড়িটির সন্ধান মেলে। দীপেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। দু’জনের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ছিনতাই করা সোনার হার ও বালা, তিনটি মোবাইল ফোন। জেরার তারা স্বীকার করে যে, ছিনতাই করা সোনার গয়না তারা বন্ধক দিত। বন্ধকের টাকায় দিনের পর দিন ফুর্তি করত তারা। শহরে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের সঙ্গে তারা যুক্ত। এই বিষয়ে তাদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.