গৌতম ব্রহ্ম: পেট-পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে তিনটি রড। ওই অবস্থাতেই বারুইপুর হাসপাতাল থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হল এক যুবককে। রড কাটতে অপারেশন থিয়েটারে ডাক পড়ল পূর্ত দপ্তরের কর্মীদেরও।
উদয় সর্দার। পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানা এলাকার দক্ষিণ নারায়ণতলায়। বছর পঁয়তাল্লিশের ওই যুবক বুধবার বারুইপুরের একটি নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িতে কাজ করছিলেন। বাড়ির পাশ দিয়েই গিয়েছে ১৫ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন। বাঁশের ভারায় কাজ করার সময় ওই লাইনেই কোনওভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন উদয়। ছিটকে পড়েন ভারা থেকে নিচের একটি রড বের করা পিলারে। পেট-পিঠ ফুঁড়ে গেঁথে যায় তিনটি রড। অন্য কর্মীরাই কাটার নিয়ে এসে রড কেটে উদয়কে উদ্ধার করেন। নিয়ে যান বারুইপুর হাসপাতালে। সেখান থেকে পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দেরি করেননি ন্যাশনালের ডাক্তাররা। রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে চটজলদি সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন সুপার সন্দীপ ঘোষ। বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. কাজি মুস্তাফিজুর রহমান। বিকেল চারটে পাঁচ নাগাদ অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তার আগে ওটি রুমে ডাক পড়ে পূর্ত দপ্তরের কর্মীদের। ঠিক হয়, ওটি ড্রেস পরিয়ে কাটার নিয়ে ওটিতে ঢুকবেন তাঁরা। উদয়ের শরীরে ঢুকে থাকা রডের বেরিয়ে থাকা অংশ কেটে ছোট করবেন। যাতে রড বের করার সময় ক্ষতি কম হয়। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, মেশিন দিয়ে রড কাটতে গেলে প্রচুর ভাইব্রেশন হত। তাতে রোগীর লিভার বা কিডনির বড় ক্ষতি হতে পারত। বেড়ে যেত ক্ষতির পরিমাণ। তাই সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ডাক্তাররা পেট কেটেই বের করেন তিনটি রড। জানা গিয়েছে, তিনটি রডের একটি লিভার ও অন্যটি কিডনির গা ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। তৃতীয়টি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ক্ষুদ্রান্ত্রকে। তাই রড ঢোকার পরও দীর্ঘক্ষণ জ্ঞান ছিল রোগীর। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় অন্যত্র। রড তিনটি বের করতে গিয়ে উদয়ের শরীর থেকে প্রায় ২ লিটারের মতো (যা শরীরে মোট রক্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ) রক্ত বেরিয়ে যায়। একসঙ্গে এতটা ‘ব্লাড লস’ অকেজো করে দিতে পারে কিডনি ও লিভারকে। এই খবর জানতে পেরে উদয়কে রক্ত দিতে ন্যাশনালে হাজির হয়েছিলেন অনেক ‘ও’ পজিটিভ রক্তদাতা। ন্যাশনালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সাংসদ ডা. শান্তনু সেনের দাবি, অত্যন্ত জটিল ছিল এই অস্ত্রোপচার। এমনিতেই রড কেটে রোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বারুইপুর হাসপাতাল হয়ে ন্যাশনালে আনতেও অনেক সময় গিয়েছে। তার উপর রোগীর শারীরিক অবস্থার এত দ্রুত অবনতি হচ্ছিল যে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করারও সময় ছিল না। শুধু এক্স-রে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই অস্ত্রোপচার শুরু করেন ডাক্তাররা। শান্তনুবাবু আরও জানান, সরকারি হাসপাতাল ও তার ডাক্তারদের মান যে কতটা ভাল তা আরও একবার প্রমাণ হল।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল রড কিডনি-লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু পেট কাটার পর স্বস্তি পান ডাক্তাররা। অস্ত্রোপচার সফল হলেও উদয় বিপন্মুক্ত হননি। তাঁকে স্থিতিশীল করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা। উৎকণ্ঠায় স্ত্রী বেবি সর্দার, ১৫ বছরের মেয়ে ও সাত বছরের ছেলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.