Advertisement
Advertisement

Breaking News

দুর্গাপুজোয় করোনার থাবা

এবছর পুজোর বাজেটও করোনার গ্রাসে, খরচ অর্ধেক করছে কলকাতার নামী ক্লাবগুলি

বড় সংস্থার বিজ্ঞাপন পাওয়া নিয়েও সংশয়।

Kolkata clubs slash Durga Puja budget amidst corona outbreak
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 18, 2020 3:28 pm
  • Updated:April 18, 2020 3:28 pm  

কৃষ্ণকুমার দাস: বিশ্বগ্রাসী মারণ করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর থাবা এবার বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয়। এক ধাক্কায় কলকাতার বড় পুজোর বাজেট যেমন গতবারের তুলনায় এবছর অর্ধেক হচ্ছে তেমনই জৌলুস ও বহর অনেকটাই কমছে নামী শারদোৎসবের। দক্ষিণের সুরুচি, চেতলা অগ্রণী, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, ৯৫ পল্লি থেকে শুরু করে উত্তরের হাতিবাগান, নবীনপল্লি, কাশী বোস লেনের মতো বিখ্যাত পুজোর আয়োজন কমানোর প্রস্তুতি লকডাউনের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। করোনা পরবর্তী চরম আর্থিক সংকটের ধাক্কায় উদ্যোক্তারা যে বাজেট কমাবেনই তা অনুমান করে পুজোর থিমশিল্পী, মৃৎশিল্পী, প্যান্ডেল নির্মাতা, কাঠমিস্ত্রি এবং ডেকারেটরের পারিশ্রমিকেরও চাহিদার ‘গ্রাফ’ কমিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে।

চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে মেগা পুজোয় যুক্ত ঠিকা শ্রমিক, নিরাপত্তারক্ষী জোগান দেওয়া সংস্থার কর্তাদের। বিজ্ঞাপন ও স্পনসরদের সমর্থন মিলবে না এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই কলকাতার একাধিক মেগা শারদোৎসবের কর্তারা থিমশিল্পী ও প্যান্ডেল নির্মাতাদের ডেকে পুজোর আকার-আয়তন অর্ধেকের বেশি কমাতে বলেছেন। এই তালিকায় যেমন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা উদয়ন সংঘ রয়েছে তেমনই রয়েছে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের পৃষ্ঠপোষকতার নবীন পল্লি বা হাতিবাগান সর্বজনীনের মতো সাত মেগা দুর্গাপুজো। মধ্য কলকাতার বিগবাজেটের পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের সম্পাদক সজল ঘোষ স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, “মহালয়ার পরেও যদি দেশে একজন কোভিড-১৯ রোগী থাকেন তবে মায়ের ইচ্ছায় শুধু ঘটপুজো হবে লেবুতলায়।” অবশ্য করোনার জেরে আর্থিক সঙ্কটকে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ ধরে নিয়েই কমবাজেটেই উৎসবে নয়া সৃষ্টি উপহার দিতে চান ভবতোষ সুতারের মতো থিমশিল্পীরা। করোনার থাবা ও লকডাউন যে পুজোর বাজেট কমাতে বড় প্রভাব ফেলবে তা স্বীকার করছেন দক্ষিণের অন্যতম সেরা পুজো সমাজসেবীর থিমশিল্পী প্রদীপ দাস। বলছেন, “উৎসবে এবার মার্জিত ও নয়া ভাবনায় বাঙালির অন্যরূপ দেখবে কলকাতা।”

Advertisement

কিন্তু প্রতিবছর গ্রাম থেকে যে কয়েক হাজার ছোট শিল্পী ও শ্রমিক এবং ঢাকিরা পুজোর কলকাতায় উৎসবকে রঙিন-বর্ণময় করতে আসেন এবছর করোনার ধাক্কায় তাঁদের রুটি-রুজি নিয়ে চিন্তায় শিল্পী থেকে উদ্যোক্তারাও। করোনা নিয়ে লকডাউন ঘোষণার অনেক আগেই সুইমিং পুল, জিম, ইন্ডোর গেম-সহ ক্লাবের সমস্ত কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিল পুরমন্ত্রীর ক্লাব চেতলা অগ্রণী। কয়েক বছর শারদোৎসবে চমক দেওয়া সেই ক্লাবের সভাপতি ফিরহাদ দিন কয়েক আগে থিমশিল্পী অনির্বাণ দাসকে ডেকে পুজোর বাজেট ৮০ শতাংশ কমানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। পুরমন্ত্রীর বক্তব্য,“আর্থিক সংকট এতটাই ধাক্কা দেবে যে মায়ের পুজো নমো নমো করে সারতে হবে। একচালা ছোট পুজো করে যদি কিছু টাকা বাঁচানো যায় তা দিয়ে অসংগঠিত শ্রমিক ও গরিবদের সাহায্য করা হবে।”

[আরও পড়ুন: রাজনীতি সরিয়ে মানবকল্যাণ, রক্তদান শিবিরে অরূপ-চন্দ্রিমার সঙ্গে এক সারিতে সুজন]

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিনে থিম পুজো, থিম সং-সহ নানা আয়োজনে পথিকৃৎ নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ। স্পনসরদের সমর্থন নিয়ে সংশয়ে পুজোকমিটির সদস্যরাও। পুজো একটু দেরিতে, অক্টোবরের শেষে হবে বলে কিছুটা আশায় আছেন অনেকে। অবশ্য সুরুচির প্রাণপুরুষ পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “করোনা পরবর্তী সময়ে কে কেমন থাকব, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তবে স্বয়ং মা দুর্গা যেমন চাইবেন তেমনই পুজো হবে।” পুজোর বাজেট অনেকটাই কমছে একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোর সভাপতি পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ডাকের সাজের প্রতিমার আয়োজক সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, “পুজোর বহর কমাতেই হবে। জৌলুস শুধু নয়, প্যান্ডেল ও প্রতিমার আকার-আয়তন সবই কমবে।” দক্ষিণের ত্রিধারা, মুদিয়ালি, রাজডাঙা নবউদয় সংঘ, বেহালা ক্লাব, নতুন পল্লি থেকে শুরু উত্তরের কাশী বোস লেন, দমদম তরুণ দলের পুজো কর্তারাও বাজেট কমানো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো কমিটির চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সম্পাদক কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বৃহস্পতিবার রাতেই আসন্ন পুজোর বাজেট নিয়ে বৈঠক করেন। পরে বাপ্পাদিত্য জানিয়েছেন, “কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাজেট কমছে এবছর। যাঁরা গত দশ বছর ধরে আমাদের পুজোয় যুক্ত আছেন তাঁদের পুরো বঞ্চিত করা যাবে না।” উত্তরের সাতটি বড় দুর্গাপুজোকে নতুন রং দেওয়া ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ সরাসরি এদিন জানান, “ আর্থিক সংকটের ধাক্কায় এবার পুজো হবে নমো নমো করে। জৌলুস কমবে, আকার কমবেই। পুজো কীভাবে হবে, খরচ কীভাবে জোগাড় হবে তা নিয়ে এখন চিন্তা সব কমিটিরই।” যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশন পুজো কমিটির সভাপতি মেয়র পারিষদ রতন দে এবছর তাঁর মেগা পুজোর দায়িত্ব দিয়েছেন পুরনো থিমশিল্পী সুশান্ত পালকে। সামাজিক দূরত্ব থাকায় মানুষকে খুব একটা ভিড়ে উৎসাহিত করা যাবে না বলে মনে করছেন রতন। বলছেন,“পুজোর বাজেট অর্ধেকের বেশি কমিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে বকেয়া টাকা তুলে দেব।”

[আরও পড়ুন: ফের রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী, ভবানীপুরে রেশন দোকানে সারপ্রাইজ ভিজিট]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement