ছবি - প্রতীকী
অভিরূপ দাস: ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কেটেছিল মোটে ৯ দিন। তার মধ্যেই করোনা ভাইরাস (CoronaVirus) হানা দিয়েছিল ফুসফুসে। তখন তার ওজন মেরেকেটে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। এর আগে ইংল্যান্ডের যে সদ্যোজাতর শরীরে হানা দিয়েছিল ভাইরাস তার ওজন ছিল ১ কেজি ৫০০। সেই হিসেবে উত্তর কলকাতার এই খুদে পৃথিবীর দুর্বলতম মানবশিশু, করোনা যাকে আঘাত করেছে।
চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথেই দেশের মধ্যে তো বটেই সারা বিশ্বের মধ্যেই নজির সৃষ্টি করল ওই সদ্যোজাত। মাত্র ২১ দিনে যার কাছে হার মানল মারণ ভাইরাস। ৩১ সপ্তাহে মা মৌসুমি ঘোষের প্রসব বেদনা উঠেছিল। উত্তর কলকাতার বাসিন্দাকে তড়িঘড়ি ভরতি করা হয় হাসপাতালে। ফুটফুটে দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। তিন দিনের মাথায় মারা যায় এক সন্তান। মাত্র ৯ দিন বয়সে দ্বিতীয় জনের কোভিড ১৯ (COVID-19) ধরা পরে। এমন সংবাদে মায়ের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পরার উপক্রম। ২১৬ ঘন্টা হয়েছে যে পৃথিবীতে এসছে কীভাবে সে লড়বে মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে?
অসুস্থ সদ্যোজাতকে নিয়ে আসা হয় ফর্টিস হাসপাতালে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিতা সাহার অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। একরত্তিরও অক্সিজেন স্যাচুরেশন নামছিল দ্রুত। প্রয়োজন ছিল অক্সিজেনের। তবে সবচেয়ে বড় কথা ৯ দিন বয়সে মাতৃদুগ্ধই একমাত্র খাবার। ফলে শিশুর যাতে পুষ্টির অভাব না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছিলেন চিকিৎসকদের টিম। ১৬ দিনের মাথায় ফের কোভিড টেস্ট, আবার পজিটিভ।
হার মানেননি চিকিৎসকরা। নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে টানা ২১ দিনের লড়াই। অবশেষে একবিংশ দিনে কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ। তবে চলে যাওয়ার পথেও ছাপ রেখে গিয়েছে ভাইরাস। শিশুটিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। ২৫তম দিনে দেখা যায় হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ট্যাকিকার্ডিয়া। ডা. সুমিতা সাহার কথায়, “করোনা পরবর্তী ক্ষেত্রে হার্টের এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। একে পোস্ট কোভিড মায়োকার্ডাইটিসও বলা হয়। শিশুটির হার্টের পেশি ঠিকমতো কাজ করছিল না এতদূর লড়াই করে এসে হেরে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।”
২৫ দিনের সদ্যোজাতকে তাই হারতে দেননি চিকিৎসকরা। বুধবার যখন সে বাড়ির পথে তার বয়স ৩১ দিন। ওজন ১ কেজি ৯০০। ডা. সুমিতা সাহার দাবি, এই শিশুই পৃথিবীর সবচেয়ে কম ওজনের মানুষ যে করোনাকে হারাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.