সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবিবারে মাংসভাত- মধ্যবিত্ত বাঙালির এ এক বিলাস। মাছেভাতে বাঙালি বটে, তবে সপ্তাহান্তের ছুটির দিনটা একটু অন্যরকমই কাটে। আর পাঁচটা দিনের থেকে একটু আলাদা। সকাল সকাল জলখাবারের থালা ধোয়া হতে না হতেই হেঁশেল থেকে ভেসে আসতে থাকে মাংস কসার গন্ধ। চিকেন হোক বা মটন- ছুটির সকাল মাংসের গন্ধে পাড়া ম ম। এ তো খুব চেনা ছবি। তবে এই রবিবারের ছবিটা যেন অনেকটাই অন্যরকম। পুরনো ছবিটায় আজ একটু যেন ছানাকাটা ভাব। ভিলেন সেই ভাগাড়। ভাগাড়ের মরা মাংস নিয়ে গত এক সপ্তাহে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাতে রবিবারের মাংস-মায়া ত্যাগ করে বিষণ্ণ বাঙালি।
[ বাড়িতেই ৫০০, ২০০ টাকার জাল নোটের কারখানা, বরানগরে চাঞ্চল্য ]
ভাগাড়ের মাংস সোজা প্লেটে। সস্তার হোটেল থেকে রেস্তরাঁ-কিছুই নাকি বাদ নেই। পুলিশি তদন্ত যত এগোচ্ছে তত সামনে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোথাও টন টন পচা মাংস মজুত। কোথাও আবার রাশিরাশি মরা মুরগির স্তূপ। রসনাতৃপ্তিতে মজে থাকা বাঙালির চোখে ধুলো দিয়ে সেইসবই দেদার চালান হচ্ছিল পাতে। এ কথা জানার পর কেইবা আর আয়েশে মুরগির ঠ্যাঙে কামড় বসাতে পারে! কচি পাঁঠার ঝোলে সপসপ আঙুল চাটতে গেলেই মনে পড়ে যাচ্ছে চ্যানেল চ্যানেলে ভেসে ওঠা ভাগাড়ের ছবি। ফেসবুক জুড়ে আবার নানা ছড়ার ঘোরাঘুরি। পাঁঠা খেয়ে যেই না তোলা ঢেকুর, পেটের ভিতর থেকে নাকি পাঁঠা বলছে, আমি ছদ্মবেশী কুকুর। বোঝো ঠ্যালা। যদিও ভারচুয়াল দুনিয়ার মশকরা, তবু সত্যিও তো কিছু আছে। আর জেনেবুঝে কেইবা কুকুর-বেড়াল খাবে! ফলে মানিকতলা থেকে মুদিয়ালি- মাংস বাজারে বেজায় মন্দা। না, ক্রেতা যে নেই তা নয়। তবে তুলনায় কম। কোত্থেকে কে মরা মাংস গছিয়ে দেবে তার ঠিক নেই। ফলত দুটি উপায় খুঁজে নিয়েছেন ক্রেতারা। এক, কেউ কেউ ঠিক করেছেন এই হপ্তায় আর মাংস নয়। ডিম কিংবা মাছেই চলুক। এমনিতেও মাসের শেষ। ভাগাড় কাণ্ড একটু থিতিয়ে গেলে নাহয় ফের কবজি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে। দ্বিতীয় মতটি অবশ্য মাংসভাতের রবিবারকে ছাড়তে নারাজ। কোত্থেকে কী ভাগাড় এল আর তার জন্য এমন সুখকে ভাগাড়ে পাঠাতে হবে তাও আবার হয় নাকি। ফলে সকাল সকাল, থলি হাতে মাংসের দোকানের সামনে লাইন দিয়েছেন বাঙালি বাবুরা। তবে শর্ত একটাই, কাটা মাংস দিলে হবে না। চোখের সামনে কেটে দিতে হবে। সেই দাবি মেনেই মাংস বেচছেন বাঁধা দোকানিরা। খাসির মাংসের বেলাতেও ক্রেতারাই একে অপরকে নিশ্চিত করছেন, এ জিনিস পুরনো নয়, সকালেই কাটা। অতএব নিশ্চিন্তি। দোকানিরা বলছেন, বাপ-ঠাকুর্দার ব্যবসা, খামোখা খারাপ জিনিস খাইয়ে মার খাব নাকি! হক কথা। এই বিশ্বাসেই চলছে মাংস কেনা-বেচা। তবু সাবধানের মার নেই।
[ পচা মাংস কাণ্ডে গ্রেপ্তার নিউটাউনের ঢালি চিকেন ফার্মের মালিক, দেখুন ভিডিও ]
তবে আম-বাঙালি একটা ব্যাপারে সহমত, আপাতত কিছুদিন রেস্তরাঁ বিহারে না যাওয়াই ভাল। ছুটির ডিনারটা মায়াবি আলোয় গা ভাসিয়ে করার আলাদা সুখ আছে বটে, তবে এই ভাগাড়ের জ্বালায় এখন আর তাতে স্বস্তি নেই। প্যাকেটের মাংস বা রেস্তরাঁর খাবারের নাম শুনলেই ইদানিং বাঙালির মুখ ভার। পাড়ার নির্ভরযোগ্য রেস্তরাঁর উপরও তেমন ভরসা নেই। আর সস্তার হোটেলে তো নৈব নৈব চ। আপাতত কিছুদিন জারি বয়কট। শুধু চেনা দোকানের টাটকা মাংস ছাড়া এখন আর কোনওকিছুতেই ভরসা নেই। আর কেউ কেউ তো মাংসের নাম মুখেই আনছেন না। ভাগাড়ের কোপ যে বাঙালির পাতেও, রবিবারের বাজার হাতেনাতেই তা টের পাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.