স্টাফ রিপোর্টার: ভরা কোটাল আর চন্দ্রগ্রহণ, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় যশের আছড়ে পড়ার সময়। এই ত্র্যহস্পর্শে আজ, বুধবার গঙ্গায় ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় তিলোত্তমা কলকাতায় ফের জলমগ্ন হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। তবে নবান্নে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, “গোদের উপর বিষফোঁড়া। একে দুর্যোগ, তাতে ভরা কটাল, সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণ। ভরা পূর্ণিমায় গঙ্গায় জলস্তর বাড়বে। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গা থেকে জল ঢুকে পড়বে। তার জন্য অবশ্য আলাদা ব্যবস্থা করা আছে।”
মৌসম ভবন মঙ্গলবার জানায়, ঘূর্ণিঝড় যশ বুধবার চন্দ্রগ্রহণের দিন বেলা বারোটার আশে-পাশে ওড়িশার দামরা পোর্টের কাছে স্থলভূমিতে আছড়ে পড়বে। সেই সময় পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকুলে যেমন ৭৫-৮০ কিমি বেগে ঝড়ের সঙ্গে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা যাবে, তেমনই ভারী বৃষ্টি হবে। একইভাবে কলকাতা মহানগরের উপর দিয়েও মুষলধারে প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ৬০-৭০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। অন্যদিকে ঠিক ওই সময়েই কলকাতার গঙ্গায় ভরাকোটাল আসছে। সকাল সওয়া ন’টায় নদীতে শুরু হবে জোয়ার। বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যাবে জোয়ারের জলের উচ্চতা।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, চন্দ্রগ্রহণ ও ভরাকোটালের যৌথপ্রভাবে গঙ্গায় জল বৃদ্ধি পাচ্ছে, সঙ্গে যশ বা ইয়াস (Cyclone Yaas)। কলকাতা পুরসভার নিকাশিবিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিং, গঙ্গায় জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে যাতে শহরে প্রবেশ না করতে পারে সেই জন্য লকগেটগুলি পরিদর্শন করেন। জানিয়ে দেন, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের জল বৃদ্ধি পাওয়ায় বুধবার গঙ্গায় সকাল সাড়ে দশটার পর থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত লকগেট বন্ধ থাকবে। পরে তারক সিং জানান, “ভরাকোটালের প্রভাবে গতকাল গঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬.৭৫ ফুট বেশি উচ্চতায় পৌঁছেছিল জলের উচ্চতা। বুধবার সেটি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১৭.২৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলে পূর্বাভাস। লকগেট বন্ধ থাকায় ওই সময় যদি প্রবল বৃষ্টি হয় তা হলে সমস্ত জল শহরেই জমে থাকবে, শহর জলমগ্ন হবেই।”
জমা জলে যশের সময় কলকাতা ভাসতে পারে আশঙ্কা করে মঙ্গলবার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র ও প্রশাসকমণ্ডলীয় সদস্য অতীন ঘোষ ভয়ানক এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে শহরবাসীর কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। বলেন, “কলকাতা একটি বাটির মতো। শহরের জমা বৃষ্টির জল বাগজোলা, চড়িয়াল ও বিদ্যাধরীর মতো যে পথেই ফেলে দেওয়া হয় গঙ্গা অথবা সাগরের মোহনায় পড়ে। তাই লকগেট বন্ধ থাকায় জমা জল সরানোর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অন্তত কয়েক ঘণ্টা জল জমবেই।” বস্তুত এই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে অতীন নাগরিকদের সতর্ক করে ঝড়ের আগে ও পরে ঘরেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, জমা জলের ভিতর রাস্তায় নেমে ফের ১১ মে রাজভবনের সামনে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিনও ঘূর্ণিঝড় রুখতে সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে চেতলার বাড়ি থেকে পুরভবনে প্রশাসক ও অফিসারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন গৃহবন্দি মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। নির্দেশ দেন, বরো ও ওয়ার্ডভিত্তিক টিমগুলিকে আরও সক্রিয় করার। প্রতিটি বরো অফিসে অ্যাম্বুল্যান্স, সেফ হোমগুলিতে পর্যাপ্ত জেনারেটর রাখার পরামর্শ দেন ফিরহাদ। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে শহরের সমস্ত ফ্লাইওভারও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.