অভিরূপ দাস: আস্ত একটা জীবন নিয়ে দড়ি টানাটানি। একদিকে মৃত্যুদূত, অন্যদিকে ডাক্তার। তবে শত চেষ্টা করেও প্রতীক মারিককে নিতে পারলেন না মৃত্যুর দেবতা। অস্ত্রোপচার করে শুধু জিভটুকু বাদ দিতে হয়েছে। তার বিনিময়ে মৃত্যুকে রুখে দিয়ে জীবনদাতা ডা. শান্তুনু পাঁজা (Dr Shantanu Panja)। ক্যানসার আক্রান্ত কোভিড রোগীর চিকিৎসা করে তাঁকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিলেন তিনি।
কোভিড (COVID-19) পজিটিভ হলেই যেখানে অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন, সেখানে করোনা আক্রান্ত প্রতীক মারিকের জিভে হয়েছিল ক্যানসার! ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু মনের জোর হারাননি প্রতীক। তরুণ যুবক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার পোস্টে চাকরি করেন। গত মে মাসে কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন। জ্বর, শুকনো কাশি, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার মতো নানান উপসর্গ ছিল তাঁর। করোনার নানান উপসর্গের মধ্যে ছিল জিভের ক্ষত।
প্রথম দিকে যখন জিভ খসখসে লাগছিল বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি প্রতীক। ভেবেছিলেন হয়তো করোনার-ই উপসর্গ।
জিভ ঠিক করতে জিঙ্ক ট্যাবলেট, ভিটামিন সি-র সঙ্গে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও খাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই কমছিল না জিভের সেই খসখসে ভাব। যে চিকিৎসক কোভিডের চিকিৎসা করছিলেন তাঁকেও বিষয়টি জানান প্রতীক। প্রথমটায় ওই চিকিৎসকও ভেবেছিলেন এটা স্বাদ চলে যাওয়ার কারণেই হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি এখনও পুরোপুরি আঁচ করে উঠতে পারছেন না তামাম দুনিয়ার গবেষকেরা। প্রতিদিনই নতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে ভাইরাস। জিভের ঘা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছলে অ্যাপোলো হাসপাতালের (Apollo Gleneagles Hospitals) কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শান্তুনু পাঁজার কাছে আসেন প্রতীক। জিভ দেখেই সন্দেহ হয় চিকিৎসকের। দ্রুত বায়োপসির পরামর্শ দেন। আশঙ্কাই সত্যি। দেখা যায় জিভে বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ (Cancer)। অস্ত্রোপচার করে কিছুটা অংশ বাদ দিতেই হবে। চিকিৎসা পরিভাষায় এ অস্ত্রোপচারের নাম পার্শিয়াল গ্লসেকটমি অ্যান্ড নেক ডিসেকশন।
রোগী কোভিড পজিটিভ হয়েছেন তখনও বেশিদিন হয়নি। এদিকে অস্ত্রোপচার করতে দেরি হলে ক্যানসার ছড়িয়ে পরবে। দ্রুত অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন ডা. পাজা। নিয়ম অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার আগে রোগীর আরটিপিসিআর টেস্ট করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। তা করাতে দেখা যায় তখনও পজিটিভ প্রতীক। তবে শরীরে তার করোনার অ্যান্টিবডিও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। ২২ মে টানা ৫ ঘন্টার অস্ত্রোপচারে বাদ দেওয়া হয় জিভের কিছুটা অংশ।
ক্যানসার কোষকে নির্মূল করতে প্রতীকের গলার কিছু গ্ল্যান্ডও পরিষ্কার করা হয়েছে। তারপর দীর্ঘদিন রাইলস টিউবে খাওয়া দাওয়া। আপাতত অনেকটাই সুস্থ প্রতীক। জিভে সেলাই থাকায় এখনও ভাল করে কথা বলতে পারছেন না। সংবাদ প্রতিদিনকে লিখেই জানিয়েছেন, “প্রথম যেদিন কথা বলবেন, চিকিৎসককে নিজের মুখে ধন্যবাদ জানাতে চান তিনি। ডা. শান্তুনু পাঁজার কথায়, “জিভ শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই আমরা এমনভাবে বাদ দিয়েছি যাতে কথা বলতে ওর কোনও সমস্যা না হয়। অস্ত্রোপচারের আগে আমরা বলেছিলাম জিভের কিছুটা বাদ দিতে হবে। রোগী ভয় পায়নি। ওর মনের জোরই ওকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.