সুব্রত বিশ্বাস: শিয়ালদহে রেল ও টিকিট পরীক্ষকদের সীমাহীন দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে এবার সরব বিহারবাসী এক চিকিৎসক। এক মাস ধরে একাধিক দুর্নীতির প্রমাণ নিয়ে তিনি এডিআরএম, ডিসিএম, রেল পুলিশের ডিজি ও এসআরপির কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও সুফল পাননি বলে জানান। বিহারের বেগুসরাইয়ের ফুলবারিয়া থানার দরগা রোডের বাসিন্দা ডাক্তার মণীশ মিশ্র এক মাস ধরে শিয়ালদহ এলাকার একটি হোটেলে থেকে রোজই দ্বারস্থ হচ্ছেন রেল কর্তা থেকে রেল পুলিশ ও আরপিএফের। এক মাস ধরে তিনি দাড়িও কামাননি। মণীশের কথায়, ‘এত বড় দুর্নীতির আখড়া না ভেঙে কলকাতা ছাড়ব না।’ এখনও পর্যন্ত হোটেল ভাড়া ষাট হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু রেলকর্তারা সব জেনেও কোনওরকম পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ তাঁর।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৪ জুলাই। মণীশ শাশুড়িকে চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আনেন। ওই দিন সকাল ৬টা নাগাদ তিনি মোবাইল অ্যাপে শিয়ালদহের প্ল্যাটফর্ম টিকিট কাটেন। এই ধরনের টিকিটে সময় থাকে না। টিকিট পরীক্ষকরা তাঁকে বলেন, নির্ধারিত সময় না থাকায় এই টিকিট এখনকার নয়। এই নিয়ে তর্কাতর্কি চলতেই মণীশের কলার ধরে টিকিট পরীক্ষকদের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ মণীশের। পরে তাঁর চিকিৎসা হয় এনআরএসে। এই ঘটনার অভিযোগ তিনি রেল পুলিশের আইজি ও সুপারের কাছে করেন। এফআইআর দায়েরও করেন। মণীশের দাবি, টিকিট পরীক্ষকরা নিজেদের দপ্তরকে শিয়ালদহে লকআপ হিসেবে ব্যবহার করছেন। দৈনিক শয়ে শয়ে যাত্রীকে ধরে লকআপে এনে জরিমানার নামে টাকা আদায় করছে। দপ্তরের মধ্যেই কোমর সমান পাঁচিল তুলে বাথরুমও তৈরি করা হয়েছে ধৃতদের জন্য। এই গারদ তৈরির কোনওরকম অধিকার টিকিট পরীক্ষকদের নেই। এই গারদরূপী দপ্তর অবিলম্বে বন্ধের দাবিও তিনি তুলেছেন। এই অলিখিত গারদের ছবিও তিনি রেলমন্ত্রীকে টুইটে পাঠিয়েছেন।
শিয়ালদহের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, টিকিট কালেক্টরদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এরপর থেকেই অভিযোগের বন্যা বইয়ে চলেছেন তিনি। মণীশ একাধিক দুর্নীতিতে সরব হয়েছেন। তিনি অভিযোগে জানান, শিয়ালদহে ১৬, ১৮ ও ২৬ নম্বর কাউন্টারে টিকিট কাটলে নির্ধারিত সময়ের জায়গায় আধ থেকে দু’ঘণ্টা আগের সময় প্রিন্ট হচ্ছে। ফলে যাত্রাকালীন অবস্থায় সময় অতিবাহিত হয়ে পড়ায় টিকিট পরীক্ষকরা যাত্রীকে ধরছেন। তিনি তিনটি কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এই দুর্নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন বলে রেলকর্তাদের লিখিত অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি শিয়ালদহ রিজার্ভেশন কাউন্টারে যাওয়ার পথটি একেবারে টিকেটিং জোন ঘেঁষা। ফলে কোনও যাত্রী ভুল করে টিকেটিং জোনে ঢুকে পড়লেই টিকিট পরীক্ষকদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। এই চরমতম দুর্নীতি রেলকর্তাদের জানা বলে দাবি করেছেন মণীশ। না হলে সব প্রমাণ হাতে তুলে দেওয়া সত্ত্বেও কোনওরকম ব্যবস্থাই নিল না রেল। এমনকী পুলিশও নিশ্চুপ। এই জঙ্গল রাজত্ব বাংলায় চলছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি স্পষ্ট করেন, এই দুর্নীতি বন্ধ করেই কলকাতা ছাড়ব। যতদিন না সংস্কার হয় ততদিন তিনি দাঁড়িও কামাবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার আর কে মেহেতা বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়, তবে সব অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে রেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.