অর্ণব আইচ: বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে ব্রিটেন থেকে উপহারের টোপ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে ১৮ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন শহরের এক মহিলা। এই প্রতারণার অভিযোগে তিন নাইজেরীয় ও একজন অসমিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চারজনকেই দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করেন পূর্ব কলকাতার আনন্দপুর থানার আধিকারিকরা। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা। কলকাতায় এই পদ্ধতিতে একাধিক প্রতারণা করেছে নাইজেরীয় চক্র। দেশের অন্যান্য শহরের বহু জায়গায় তারা এই ‘মোডাস অপারেন্ডি’তেই প্রতারণা চালিয়েছে। ইতিমধ্যেই এন্টালির এক প্রৌঢ়াকে এভাবে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ দুই নাইজেরীয়কে গ্রেপ্তার করে। আনন্দপুরের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ইরাব্রার, ট্রেস থমসন ও ইম্মানুয়েল গ্লোরি নামে তিন নাইজেরীয় প্রতারণার টাকা রাখত অসম-সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যাংকে। অসমের বাসিন্দা গ্লোরিয়া মারাঠ নামে ওই বিদেশিদের এক সঙ্গিনী বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা রেখে তাদের সাহায্য করত। ধরা পড়েছে সেও।
পুলিশ জানিয়েছে, গত জুন মাসে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন আনন্দপুরের একটি নামী আবাসনের বাসিন্দা এক মহিলা। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় এক ব্যক্তির। সে নিজেকে ব্রিটেনের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। ফোন নম্বরেরও আদানপ্রদান হয়। একে অন্যের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ রাখতেন। বন্ধুত্বের খাতিরেই ওই ব্যক্তি মহিলাকে বলে, বিদেশ থেকে সে প্রচুর উপহার পাঠাচ্ছে তাঁকে। শুধু তাঁকে শুল্কের জন্য কিছু টাকা দিতে হবে। বিদেশি বন্ধুকে বিশ্বাস করে তিনি প্রথমে হাজার কয়েক টাকা দেন। তারপর একে একে মেসেজ আসতে শুরু করে। ওই ব্যক্তি কখনও বলে, দিল্লি বিমানবন্দরে আটকে রয়েছে ওই জিনিসগুলি। তার জন্য বেশ কিছু টাকা লাগবে। তাঁকে শুল্ক দপ্তরের জাল কাগজপত্রও পাঠানো হয়। এভাবে বেশ কয়েক দফায় মোট ১৮ লক্ষ টাকা দেন ওই মহিলা।
এরপরও সে টাকা চাইলে তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারকের জালে পড়েছেন। তিনি ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন টাকা দেবেন না। তখন ওই ব্যক্তি তাঁকে কটূক্তিও করে। এই বিষয়ে মহিলা আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মোবাইল নম্বর ও ল্যাপটপের আইপি অ্যাড্রেস ধরে তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, যে অ্যাড্রেস থেকে যোগাযোগ করা হয়, সেটি ইম্মানুয়েল গ্লোরি নামে এক মহিলার। পুলিশ নিশ্চিত হয়, ব্রিটেনের কোনও ‘বন্ধু’ তাঁকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠায়নি। তা পাঠিয়েছে নাইজেরীয় প্রতারকরা। সেইমতোই দিল্লিতে গিয়ে ফাঁদ পাতেন পুলিশ আধিকারিকরা। তাতেই পা দিয়ে পুলিশের জালে পড়ে ইম্মানুয়েল নামে ওই মহিলা। তাকে জেরা করেই বাকি দুই নাইজেরীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা যায়, থমসন নামে ওই ব্যক্তিই এই চক্রের মূল মাথা। প্রতারণার টাকা দিল্লি থেকে পাঠানো হত উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। তারপরই দিল্লি থেকে ধরা পড়ে অসমের মহিলা গ্লোরিয়া। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাংকের বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে এই চক্রের অন্যদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.