সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: রাজনৈতিক সংযোগ ছিল না কোনওকালে। সংকটের সময় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পাশে থাকতে শুধু নিজের মতো করে কাজ করে গিয়েছেন। NRC, CAA বিরোধী আন্দোলন থেকে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান তুলে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। তারপর কোভিড (COVID-19) কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তিনি কার্যত হয়ে উঠেছিলেন ‘মসিহা’। আর সেই সমাজসেবা থেকেই এবার সোজা রাজ্যসভায়! বীরভূমের সেই ভূমিপুত্র, সংখ্যালঘু প্রতিনিধি সামিরুল ইসলামই রাজ্যসভা (Rajya Sabha) নির্বাচনে তৃণমূলের বড় চমক। নতুন দায়িত্ব পেতে চলার খবরে উচ্ছ্বাস কম, কড়া প্রস্তুতিতে নেমেছেন সামিরুল। ১২ জুলাই প্রার্থীপদে মনোনয়ন। তার আগে সংবিধান পড়ে প্রস্তুত হচ্ছেন সামিরুল। এছাড়া এবার রাজ্যসভায় নতুন প্রার্থীদের মধ্যে তৃণমূলের আরও একটি মাস্টারস্ট্রোক চা বলয়ের পরিশ্রমী নেতা প্রকাশ চিক বরাইক। জাতীয় স্তরে দলের মুখপাত্র তথা সমাজকর্মী সাকেত গোখলেকেও রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে তৃণমূল।
সামিরুল ইসলাম। রামপুরহাটের যুবকের পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র কলকাতায়। মণীন্দ্র কলেজে পড়াশোনার পর এখন দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের কেমিস্ট্রির অধ্যাপক। কুড়মি, আদিবাসী জনজাতি-সহ সংখ্যালঘু সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বছর দশেক আগে। বাংলার সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রথম আন্দোলন, এমনই বলেন সামিরুল। তারপর NRC, CAA বিরোধী লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে কোভিড কালে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে সাহায্য করার বিষয় অগ্রণী ভূমিকা নেন সামিরুল। তৈরি করেন ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’। সেসময় মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যে কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার ভূয়সী প্রশংসাও শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে।
এসবের সূত্রে তৃণমূল (TMC) শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়। নবজোয়ারে গিয়েও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর খোঁজ নেন। সোমবার বিধানসভায় এসেছিলেন ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর সম্পাদক। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ”রাজ্যসভা আলাদা জায়গা। সেখানে বলার জন্য আমি প্রস্তুত হচ্ছি। পড়াশোনা করছি। বাংলার অনেক বিষয় আছে, যা নিয়ে সরব হওয়া প্রয়োজন। কুড়মি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সকলের জন্য বলব। আমি মানুষের প্রতিনিধি।” নতুন দায়িত্বের খবর শুনে বেশ নার্ভাস সামিরুল।
এদিকে ডুয়ার্সের চা বলয়ের জনপ্রিয় নেতা প্রকাশ চিক বরাইক। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তিনি। চা শ্রমিকদের নানা ইস্যুতে আন্দোলন সংগঠিত করা কিংবা তাঁদের উন্নয়নে সরকারি নানা প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিতে অত্যন্ত তৎপর এই নেতা। ফলে চা বলয়ের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন। উত্তরবঙ্গের একটা অংশ পদ্ম ফুটে ওঠা গেরুয়া শিবিরের বাড়বাড়ন্ত, ডুয়ার্সের মাটি থেকে পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি তোলা বিজেপি নেতাদের মোকাবিলা করা, প্রান্তিক সমাজ থেকে উঠে আসা প্রকাশ চিক বরাইকের উপর আস্থা রেখেই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল। খবর পেয়েই উৎসবের মেজাজ। সবুজ আবির মাখিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন দলের কর্মী-সমর্থকরা।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিক, সমাজকর্মী সাকেত গোখলেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অরাজনৈতিক সাকেত মূলত RTI অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগদানের পর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় আর্থিক তছরূপের অভিযোগে গুজরাট পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। জেল হেফাজতেও থেকেছেন। বিজেপি বিরোধী হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত মুখ সাকেত। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্রকে গুজরাট পুলিশ হেনস্তা করেছে বলে সেসময় সুর চড়িয়েছিল বাংলার শাসকদল। এবার সংসদের উচ্চকক্ষেও সাকেত প্রশ্নবাণে বিঁধতে চলেছেন বিজেপিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.