ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সাত-আটের দশক। অস্থির সময়। প্রতিবেশী প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী নব যুবক সংঘ ওরফে ফাটাকেষ্টর পুজো (Fatakesto Kali Puja)। কেউ কারও চেয়ে কম না। একবার পুজোর বিসর্জনে ৪৬টা ব্যান্ড নামিয়েছিলেন গ্রেট কেষ্টদা, কেষ্ট দত্ত। প্রতিযোগিতার বহরে শেষে গয়না বন্ধক রাখেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের ছোড়দা। বিসর্জনের প্রসেশনে নামালেন ৫২টা ব্যান্ড! তবে? সোমেন মিত্র (Somen Mitra) বলে কথা!
পুজোর (Kali Puja 2022) ৮১তম বছরে স্মৃতি রোমন্থন করতে বসে ৭৬ বছরের বৃদ্ধ রাম সিংয়ের মনে ফের রোমাঞ্চ। পুজো কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এ পুজোর শুরু হলেও রমরমা আরও বছর কুড়ি পরে। হাল ধরেন সোমেন মিত্র। কোভিড (COVID-19) তখন দূর চেতনাতেও নেই। বছর কয়েক আগের এক কালীপুজোর বিকেলে আমহার্স্ট স্ট্রিট গমগমে। পুজো মণ্ডপের পাশের ৪৫ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিট তাঁর পুরনো বাড়ির ঠিকানা। তারই ফুটপাথে বসে আপাদমস্তক সাদা পোশাকে মূর্তিমান সোমেন মিত্র।
সোমেনবাবুর পরণে ধুতি-পাঞ্জাবির সঙ্গে প্রিয় একজনের দেওয়া চপ্পলজোড়াও ছিল। সেও সাদা। ধ্যানমগ্নের স্মিত হাসি মুখে নিয়ে মণ্ডপের সামনে বসে বিসর্জনের এমনই শোভাযাত্রার গল্প শোনাচ্ছিলেন, ‘‘নকশাল আমলে আমাদের খুব সাবধানে সে সব করতে হত। যেদিক দিয়ে বিসর্জনের মিছিল যেত, তার উলটোদিকের কথা সবাইকে জানিয়ে রাখতাম। যাতে আসল মিছিলে কোনও হামলা না হয়।’’ একাধিকবার তাঁকে এও বলতে শোনা গিয়েছে যে, তাঁর রাজনৈতিক উত্থান এই মায়ের পুজোর পর থেকেই।
‘ছোড়দা’ নেই। তবু বছর বছর স্রেফ নামের যশে এখনও আলোয় উজ্জ্বল আমহার্স্ট স্ট্রিটের কালীপুজো। যে সনাতন রুদ্র পাল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একডালিয়া এভারগ্রিনের প্রতিমা গড়তেন, তাঁরই হাতে সাবেকি ঢঙে প্রতিমা গড়ার ভার দিয়েছিলেন সোমেনবাবু। এবারও একইভাবে গোটা রাস্তাজুড়ে ঝলমলে আলোর গেট বসছে। সাজছে গোটা আমহার্স্ট স্ট্রিট চত্বর। কলেজ স্কোয়ারের সভাপতি ছিলেন সোমেনবাবু। কিন্তু আসলে ছিলেন কালীভক্ত। সিঙ্গুরের বাড়ির পুজো সেরেই চলে আসতেন আমহার্স্ট স্ট্রিটে। শ্রীদেবী তখন মধ্যগগনে। অথচ সোমেনবাবুর জন্য তাঁকে কাছ থেকে দেখেছে এ পাড়ার লোক। এ ছাড়া রাজনীতির তারকা যেমন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়রাও এ পুজো আলো করে আসতেন।
সোমেনবাবুর পর পুজোর দায়িত্ব এখন সামলান তাঁর ছায়াসঙ্গী তথা মুখ্য উদ্যোক্তা ও কোষাধ্যক্ষ বাদল ভট্টাচার্য। সঙ্গী সভাপতি সোমেনবাবুর মেজো ভাই রবীন্দ্রনাথ মিত্র, যুগ্ম সম্পাদক ও প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরী, সোমেনবাবুর স্ত্রী প্রাক্তন বিধায়ক শিখা মিত্র, ছেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোহন মিত্র, লাল্টু চক্রবর্তীরা। সুমনবাবুর কথায়, ‘‘এ পুজো আমাদের আবেগ। আর সোমেনদা আমাদের প্রাণ। সেই প্রাণ আজও আমাদের মধ্যে আছে বলেই সোমেনদার দেখানো পথে আমরা পুজোটা করছি।’’ এবার একটি ফাইবারের মূর্তি রাখা থাকবে উলটোদিকের সোমেন মিত্র নামাঙ্কিত মঞ্চে। পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজ চলবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.