স্টাফ রিপোর্টার: আধুনিক অস্থিশল্যবিদরা বলেন ‘অ্যানাস্টোমোসিস।’ বিষয়টা হল একই দেহের অন্য অংশের ধমনি-শিরাসহ অস্থি প্রতিস্থাপন করলে নতুন অঙ্গে সেটি অতি দ্রুত জুড়ে যায়। যতদিন ব্যক্তি বেঁচে থাকে ততদিন সেটি সক্রিয় থাকে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এই কাজটাই করেছে পিজি হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ।
খেলাধুলো দুরস্থান। হাঁটুর ব্যথায় ঘরের বাইরে যেতে পারছিল না ক্লাস নাইনের ছেলেটি। বাড়ি বাকুঁড়ার গঙ্গাজলঘাটি। পিজি হাসপাতালে অস্থি বিভাগে নিয়ে আসা হয় গত সপ্তাহে। দু-একটা পরীক্ষার পর ডাক্তারবাবু বললেন, ‘‘ডানপায়ের হাঁটুর নিচ (টিবিয়া) থেকে গোড়ালির শক্ত হাড়ের পাশে থাকা সরু হাড় ক্যানসারে ক্ষয়ে গেছে।’’ অস্থিশল্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুকুল ভট্টাচার্যর কথায়, “এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে দু’টি পথ। প্রথমত, ক্যানসার আক্রান্ত পায়ের অস্থিকে বের করে কেমোথেরাপি দিয়ে সমস্ত কোষ পুড়িয়ে ফের প্রতিস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, অন্য পা থেকে টিবিয়া-ফিবুলা সহ শিরা ও রক্তবাহী নালি আক্রান্ত পায়ে প্রতিস্থাপন করা।’’ অর্থোপেডিক ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ যৌথভাবে দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিয়েছে। কারণ রোগীর বয়স কম। অনেকদিন কাজ করতে হবে। তাই সুস্থ পায়ের থেকে সবটা নিয়ে আক্রান্ত পায়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন তাহলে অন্য পা তো দুর্বল হয়ে যাবে?
মুকুলবাবুর কথায়, “অদ্ভুত মানবদেহ। শরীরে এমন কিছু অঙ্গ থাকে যা দু’টি করে। যেমন দু’টি চোখ। দুটি কিডনি। তেমনই টিবিয়া-ফিবুলা। এক পা থেকে তুলে অন্য পায়ে প্রতিস্থাপনের ফলে একটি খানিকটা কমজোরি হলেও ছেলেটার জীবন বেঁচে গেল। না হলে নতুন করে অস্থিমজ্জা তৈরি হতে অনেকটা সময় চলে যেত।” গত বৃহস্পতিবার টানা বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্লাস্টিক সার্জারির ডা. নীলাঞ্জন পাল, কল্যাণ দাস, সুশোভন লাহা এবং ডা. কৌশিক নন্দী। পাঁচদিন পর এখন কিশোর অনেকটা সুস্থ। পা নাড়তে পারছে। পিজির অর্থোপেডিক চিকিৎসকদের কথায়, বিদেশে এমন অস্ত্রোপচার অনেকদিন ধরেই চলছে। এবার আরও একধাপ এগোলো পিজি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.