ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কারগিল যুদ্ধে কোন ফাইটার বিমান ব্যবহার হয়েছিল? অথবা নৌ বাহিনীতে অ্যান্টি সাবমেরিন এয়ারক্রাফট কীভাবে কাজ করে? এমন হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খায় আমাদের মধ্যে। বই পড়ে বা গুগল সার্চ করে এতদিন এইসব প্রশ্নের হদিশ মিলেছে ঠিকই, তবে এবার তা দেখা যাবে সামনা সামনি৷ টিকিট কাটলেই ওঠা যাবে দু’হাজার কোটি টাকার যুদ্ধবিমানে৷ আস্ত একটা অ্যান্টি সাবমেরিন এয়ারক্রাফট দেখা মিলবে স্বচক্ষে। আর খুব শীঘ্রই এই সুযোগ মিলবে কলকাতায়। নিউটাউনে বিশ্ববাংলা গেটের পাশেই রাখা হবে নৌ বাহিনীর এমনই একটা বিমান। সৌজন্যে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও নগরোন্নয়ন দপ্তর।
[ আরও পড়ুন: অটোর টুলবক্সে করে পাচার আড়াই কোটির সোনা, ধৃত ৩ মহিলা-সহ চালক ]
নিউটাউনে প্রায় দু’একর জমির উপর তৈরি হচ্ছে রাজ্যের প্রথম এয়ারক্রাফট মিউজিয়াম। কেএমডিএ সূত্রে খবর, মার্চ মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তি হয়। তারপরই এই পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। বস্তুত, কলকাতার দ্রষ্টব্য বিষয়ের মধ্যে এই মিউজিয়াম খুব শীঘ্রই জায়গা করে নেবে। রাজ্যে আরও পর্যটক আনতে এই উদ্যোগ বিশেষ ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে করছেন বিভাগীয় আধিকারিকরা। এয়ারক্রাফট মিউজিয়ামে যে অ্যান্টি সাবমেরিন এয়ারক্রাফট আনা হবে সেটি রাশিয়ায় তৈরি। ‘টুপুলেভ টি ইউ–১৪২’ মডেলের এই যুদ্ধবিমানটি ১৯৮৮–র মার্চ থেকে ২০১৭–র মার্চ পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীতে কাজ করার পর ‘অবসর’ নিয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছরে এই বিমানটিকে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় উপকূলভাগে কখনও কসরত দেখিয়েছে সেটি, আবার কখনও বা শত্রুপক্ষের বহরে হানা দিয়ে বিনা বাধায় কাজ হাসিল করে ফিরেছে।
[ আরও পড়ুন: মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি বিপর্যয়, নাম না করে বিজেপিকে তোপ মমতার ]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা দিয়ে এই যুদ্ধবিমানটি কিনতে হলেও কেএমডিএ কিন্তু নিখরচায় এটি পাবে এমনটাই জানিয়েছেন বিভাগীয় আধিকারিকরা। চেন্নাই থেকে কলকাতায় উড়িয়ে আনার পর মিউজিয়ামে রাখার আগে যুদ্ধবিমানটির কিছুটা রদবদল করা হবে, যাতে দর্শকরা বিমানে উঠতে পারেন। এই কাজের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও যুদ্ধবিমান ‘ডি–কমিশনড’ বা অবসর নেওয়ার পর সেটিকে কেটে টুকরো করে ফেলা হয়। কিন্তু কেএমডিএ এয়ারক্রাফট মিউজিয়াম করতে চাওয়ায় গোটা যুদ্ধবিমানটাই প্রতিরক্ষামন্ত্রক থেকে নিখরচায় নিখরচায় পাওয়া যাবে। এয়ারক্রাফট মিউজিয়াম করার জন্য বড় গেট করতে হবে। বিমানটি রাখার জন্য হ্যাঙার তৈরি করতে হবে। প্রথমে যুদ্ধবিমান আনা হলেও কয়েক মাস পর একটি সাবমেরিনও আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
[ আরও পড়ুন: একই দিনে জোড়া বিভ্রাট, নেতাজি ভবন ও যতীন দাস স্টেশনে মেট্রোর দরজায় গন্ডগোল ]
এখন দেখা যাক রাশিয়ান সংস্থা টুপুলেভ–এর তৈরি টিইউ–১৪২মডেলের এয়ারক্রাফটের বিশেষত্ব কী? তথ্য বলছে, ১৯৬৮ সালে প্রথম এই ধরনের যুদ্ধবিমান তৈরি করে রাশিয়া। ভারতীয় বিমান বাহিনীতে প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৭২ সালে। অন্তত একশোটি এই মডেলের যুদ্ধবিমান তৈরি হয়। রাশিয়া এই যুদ্ধবিমান তৈরি করেছিল মার্কিন নৌবাহিনীর ইউজিএম–২৭ পোলারিস সাবমেরিন ধ্বংস করার জন্য। প্রায় ২৯৫ বর্গমিটার লম্বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই বিমানটি প্রায় ন’হাজার কেজি পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। প্রথমে বারো চাকার বিমান হলেও পরে এটির পরিবর্তন করে চার চাকার করা হয়। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর রাশিয়া এই যুদ্ধবিমানটি হস্তান্তর করে। এর আরও বিশেষত্ব হল এই যুদ্ধবিমানে রয়েছে এমন একটি রাডার, যা নিয়মিত তার পাল্লার মধ্যে থাকা সব বস্তুর উপর সবদিক থেকে নজরদারি করতে পারে। এমন একটি ডি–কমিশনড অ্যান্টি সাবমেরিন এয়ারক্রাফট ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে জানতে পেরেই যোগাযোগ শুরু করে নগরোন্নয়ন দপ্তর। তারপরই কলকাতায় আনার তোড়জোড় শুরু হয়। শুরু হয় মিউজিয়াম তৈরির কাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.