কৃষ্ণকুমার দাস: চিতাভস্মের মধ্যেই পরশরতন খুঁজে পাবেন করোনায় মৃতের পরিবার, পরিজন। সংক্রমণের আশঙ্কায় যে দেহ স্পর্শ করতে দেওয়া হয়নি এবার তাঁর ভস্ম ভর্তি কলসি হাতে নিয়ে প্রয়াত রোগীর স্পন্দনের অনুভূতি ফিরে পাবেন প্রিয়জনরা। আত্মার শান্তি কামনায় কলকাতার গঙ্গা বা প্রয়াগের ত্রিবেনী সঙ্গমে বিসর্জন দিতে পারবেন চিতাভস্ম। কোভিডে মৃত্যু হলেও বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহর পর পারলৌকিক ক্রিয়ায় পরিজনকে এমনই সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশে করোনায় মৃতের দেহ প্লাস্টিক প্যাকেটে ভর্তি করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে সটান ধাপার বৈদু্যতিক চুল্লিতে দাহ করছিল পুরসভাই। কিন্তু কখন দেহ পোড়ানো সম্পূর্ণ হচ্ছে এবং ছাই কী হচ্ছে তা কিছুই জানতে পারছিলেন না মৃতের পরিবার। বস্তুত এই কারণেই সৎকারের পর নদীতে গিয়ে পোশাক ছেড়ে একবস্ত্র পরার মতো শ্মশান পরবর্তী লৌকিক আচারে সমস্যায় পড়ছিলেন। বুঝতে পারছিলেন না দিন না রাতে দাহ ক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে। অনেক মৃতের পরিবার থেকে বিষয়টি নিয়ে পুরসভায় অভিযোগ করেন। তাই এবার করোনার দেহ দাহ সম্পূর্ণ হওয়া মাত্রই ‘সময় ও চিতাভস্ম’ পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। চিতাভস্ম দিলেও সংক্রমণের আশঙ্কায় নাভি বা অস্থি দেবে না পুরসভা। করোনা আক্রান্ত মুসলমানদের মৃত্যু হলে পুরসভাই কবর দিচ্ছে। এতদিন কোথায় কবর দেওয়া হল তা স্পষ্ট করে জানানো হত না। কিন্তু এবার কবর হওয়ার পর মৃতের পরিবারকে নিয়ে এসে দূরে দাঁড়িয়ে শেষশ্রদ্ধারও সুযোগ করে দিচ্ছে পুরসভা। চাইলে দূর থেকে ‘এক মুঠো মাটি’ও প্রিয়জনের কবরে দিতে পারবেন আত্মীয়-পরিজন।
কোভিডে মৃতের পরিবারকে পারলৌকিক ক্রিয়ায় সাহায্য করার পুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ফিরহাদ বলেন, “বৈদ্যুতিক চুল্লিতে ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দেহ দাহ করার পর আর কোনও ভাইরাস বা জীবাণু থাকছে না। তাই চিতাভস্ম সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত বলেই ছোট কলসি করে দেওয়া হচ্ছে। কখন দেহের দাহ সম্পূর্ণ হল তাও নিকট আত্মীয়কে ফোনে অথবা মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হবে।” এতদিন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সংক্রমণের ভয়ে পরিবারকেও দেহকে দেখতে দেওয়ার নিয়ম ছিল না। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের সিদ্ধান্ত, স্পর্শ না করতে পারলেও নির্দিষ্ট সুরক্ষাবিধি মেনে কাছে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো মৃতের মুখ দেখতে পাবেন পরিজনরা। তবে দাহ সম্পূর্ণ হওয়ার পর চিতাভস্মের কলসি হাতে নিয়ে এবার প্রিয়জনকে ফের ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি ফিরে পাওয়ার সুযোগ এসে গেল।
করোনায় মারা গেলে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। কবে, কোথা থেকে পাওয়া যাবে তা স্পষ্ট জানতে পারছিলেন না মৃতের নিকট আত্মীয়রা। কিন্তু এবার যেহেতু দাহর সময় জানানো হচ্ছে, চিতাভস্ম তুলে দিচ্ছে তাই কেওড়াতলা-নিমতলার মতই দাহ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়া মাত্রই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে পুরসভা। ধাপার বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ দাহ হলেও বিনামূল্যে সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে তপসিয়ায় বোট ক্লাবের পাশে হিন্দু বুরিয়াল গ্রাউন্ডের অফিস থেকে। দিন কয়েক পরে পুরসভার সদর দফতরে স্বাস্থ্যভবন থেকেই নিয়ম মেনে এই ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য করোনা পরিস্থিতি মানুষকে এতটাই অসহায় করেছে যে কোভিড আক্রান্ত না হয়েও কেউ যদি হাসপাতালে মারা যান তবে তার দেহ পুরসভাকে সৎকার করার দায়িত্ব নিচ্ছেন না পরিজনরা। দুর্ভাগ্যজনক এমন তথ্য জানিয়ে পুরমন্ত্রী বলেন, “দৈনিক কোভিড নয় এমন দু-তিনটি করে দেহ পুরকর্মীদের সৎকার করতে হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.