কৃষ্ণকুমার দাস: যখন তিনি মন্ত্রী হিসাবে তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে জাত-ধর্ম নিয়ে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি ও নানা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কিন্তু না পিছিয়ে গিয়ে তিনি পর্ষদের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। বরং উলটে আরও বেশি করে দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট মন্দির সংস্কার-সৌন্দর্যায়নের মতো হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের উন্নয়নে মন দিয়ে ‘দোষ’ কাটাতে নেমেছেন তিনি। তিনি ফিরহাদ হাকিম। এখন কলকাতার মেয়র, সঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। এবার অভিযোগ পেয়ে উত্তর কলকাতার ১৩৩ বছরের পুরনো মা ভবতারিণীর মন্দির দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিলেন মেয়র।
ভবতারিণী মন্দির এবং লাগোয়া দু’টি শিব মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি তিনটি দেবস্থানকে হেরিটেজ ঘোষণার প্রক্রিয়াও শুরু করালেন তিনি। বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের মন্দির তিনটি পরিদর্শনে যান পুরসভার ইঞ্জিনিয়র ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা। মেয়রের ঘোষণা, ভবতারিণীর ভক্তদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে পুরসভার হেরিটেজ ফান্ড থেকে অর্থ দিয়ে কলকাতার এই তিন প্রাচীন মন্দির সংস্কার করা হবে। রক্ষা করা হবে অতীত-ঐতিহ্য।
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর দেওয়ান ছিলেন তুলসীরাম ঘোষ। তাঁর শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করতে নাতনি দয়াময়ীদেবী ১৮৮৬ সালে মা ভবতারিণীর মন্দিরটি তৈরি করেন। তার পর পরই পাশের দু’টি শিব মন্দিরও গড়ে তোলেন তিনি। শ্যামপুকুর থানার পাশে এই মন্দিরটির ঠিকানা ২এ, বলরাম ঘোষ স্ট্রিট। উলটো দিকে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়। গত ১৩৩ বছর ধরে এই মায়ের মন্দিরটি শুধু উত্তর কলকাতা নয়, বাংলার বিভিন্ন জনপদের ভক্তদের কাছে খুবই পুণ্যস্থান বলে স্বীকৃত। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর দয়াময়ীদেবী ঘোষণা করেছিলেন, পাশের দশ কাঠা জমি ব্যবহার করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা থেকেই তিন দেবস্থানের পুজোর খরচ চালাতে হবে। সেই মতো চলে আসছিল। কিন্তু বছর কয়েক ধরে ওই দশ কাঠা জমি আর ঘোষ পরিবারের দখলে নেই। এখন সেখানে একটি গ্যারাজ হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে।
বুধবার ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে টোল ফ্রি ফোন নম্বরের সামনে বসেছিলেন মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই তাঁর কাছে তুলসীরামের উত্তরপুরুষ মানবেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী জয়তী ঘোষ ফোন করেন। অভিযোগ করেন, “দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও ওই দশ কাঠা জমি জবর দখল হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেবতার নামের সম্পত্তি বেআইনিভাবে তিরিশ জনের নামে ঠিকা-ভাড়াটিয়া হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। আর্থিক দুরাবস্থার কারণে নিত্যদিনের পুজো চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পক্ষে। পাশাপাশি অর্থের অভাবে ঐতিহাসিক এই মন্দির সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।”
পুরো বিষয়টি শোনার পর তিনটি মন্দির হেরিটেজ ঘোষণার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে কমিশনারকে নির্দেশ দেন মেয়র। একই সঙ্গে দেবস্থানগুলির সংস্কারের জন্য বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব দেন। পাশাপাশি কীভাবে ঠিকা থেকে ফের দেবোত্তর জমি উদ্ধার করা যাবে তার পরামর্শ দিয়ে এক অফিসারকেও দায়িত্ব দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.