কৃষ্ণকুমার দাস: গাড়ির কালো ধোঁয়া ও ধুলো প্রতিদিনই জমছে গাছের পাতায়। কার্বন ও ধুলো জমে অধিকাংশ গাছের সবুজ পাতার রন্ধ্রপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপাদন হয়ে বাইরে আসতে পারছেন না। বস্তুত এই কারণে এবার পাঁচতলা বাড়ির সমান উচু পর্যন্ত সমস্ত গাছের পাতার জমা ধুলো জল দিয়ে ধুয়ে ‘কার্বনের ক্লেদ ও মালিন্য’ মুক্ত করার বিশেষ অভিযানে নামছে কলকাতা পুরসভা। এখানেই শেষ নয়, মহানগরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে দুই ওয়ার্ড পিছু একটি করে বিশ্বমানের ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ যন্ত্র বসানোর ভাবনাও শুরু হয়েছে পুরভবনে। নবান্নের অনুমতি ও আর্থিক মঞ্জুরি পেলে অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনের মতো যন্ত্রেই কলকাতার বায়ুমণ্ডল পরিশোধন হবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে পুরসভার তরফে।
কলকাতায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গাড়ি। বাতাসে বাড়ছে কালো ধোঁয়া-ধুলো এবং কার্বনকণার হার। বিশেষ করে এই ধোঁয়া ও ধুলো গাছের পাতায় গিয়ে জমে মোটা আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। একসময় বৃষ্টির ধাক্কায় শহরের গাছের পাতায় জমে থাকা অধিকাংশ ধুলো ধুয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক বছরে শহরে একদিকে যেমন বৃষ্টির হার কমেছে, অন্যদিকে এই ধুলো ও ধোঁয়া জমার পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। মাত্র কয়েকদিনেই সবুজ পাতার উপর ও নিচ দু’দিকেনই মোটা ধুলো-কার্বনের স্তর তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর এই কারণেই গাছের সবুজ পাতার রন্ধ্রপথ দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেকটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বস্তুত এই কারণে মহানগরের বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমিয়ে অক্সিজেনের জোগান বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাছের পাতায় জমা ধুলোর আস্তরণ ধুয়ে ফেলার জরুরি কর্মসূচি শুরু করছে কলকাতা পুরসভা। পার্ক ও উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার শুক্রবার জানিয়েছেন, “গাছের পাতার জমা মোটা ধুলোর স্তর সরাতে আপাতত দশটি বিশেষ গাড়ি নামানো হচ্ছে। এই গাড়ি দিয়ে পাঁচতলা উচ্চতা পর্যন্ত শহরের সমস্ত গাছের পাতা ধুয়ে ফেলা যাবে। পুজোর আগে আরও দশটি গাড়ি আসবে। তখন ২০টি গাড়ি একসঙ্গে ভোরের আলোয় শহরের সবুজ পাতাকে স্নান করিয়ে মালিন্য মুক্ত করবে।” মেয়র পারিষদ উদ্যান জানিয়েছেন, গাড়ি ছাড়াও রাস্তার মাঝের ডিভাইডার ও পার্কে যে সমস্ত ছোট গাছ এবং গুল্ম আছে সেখানেও পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলার কাজ চলবে। শহরে গাছের সবুজ পাতা যত বেশি পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে ততই বাতাস বেশি পরিশুদ্ধ হবে।
পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে শহর জুড়ে কাঁদুনে দেবদারু ও নিমগাছ বসানোর পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে বিশ্বমানের ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ যন্ত্র বসানোর ভাবনা শুরু হয়েছে কলকাতা পুরভবনেও। দিন কয়েক আগে পুরসভার সদর দফতরে বহুজাতিক সংস্থার তৈরি এমন একটি বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছে। নয়া যন্ত্রটি একদিকে যেমন বাতাস থেকে বিপুলহারে কার্বন শুষে নিচ্ছে অন্যদিকে তেমনই বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকা দূষণের কণার পরিমাণও পরিমাপ করছে। আপাতত একমাস ধরে ওই যন্ত্রের তথ্য সংগ্রহ করার পর পুরো পরিস্থিতি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মেয়র পারিষদ উদ্যান দেবাশিস কুমার জানান। পুরসভা সূত্রে খবর, এয়ার পিউরিফায়ারের একটি যন্ত্রের দাম প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। তাই শহরের বায়ুমণ্ডল ওই প্রস্তাবিত যন্ত্র দিয়ে পরিশোধন করতে হলে কমপক্ষে ৭২টি যন্ত্র প্রয়োজন। খরচও হবে বিপুল অঙ্কের টাকা। কিন্তু পুরসভা এত টাকা খরচ করবে না। তাই আর্থিক দিক চিন্তা করে প্রস্তাবটি রাজ্য সরকার তথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এদিনই পুরভবনের সামনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন কর্মসূচিতে চারাগাছ বিলি করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার, দেবাশিস কুমার, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.