কৃষ্ণকুমার দাস: এবার কনটেনমেন্ট জোনে পাড়ায় পাড়ায় শিবির করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের লালারস সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা শুরু করল কলকাতা পুরসভা। বিশেষ করে যে সমস্ত ওয়ার্ড আপাতত সর্বাধিক সংক্রমণপ্রবণ বলে চিহ্নিত সেই এলাকা থেকে লালারস সংগ্রহ করে পিজি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট সরাসরি পুরসভায় আসবে এবং মাইক্রোপ্ল্যানিং ধরে পরবর্তী ধাপে চটজলদি চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। পর্যায়ক্রমে শহরের সমস্ত ওয়ার্ডেই এই পরীক্ষার জন্য শিবির করা হবে বলে বুধবার কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন।
তাঁর কথায়, “প্রথমদিন ২৫০ জন ব্যক্তির থেকে লালারস সংগ্রহ করা হয়েছে। দৈনিক হাজার ব্যক্তির পরীক্ষার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।” এখানেই শেষ নয়, পিজি’র উপর ভরসা না করে নিজস্ব ল্যাবেই করোনা পরীক্ষার জন্য আইসিএমআর-এর কাছে পুরসভা অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে বলেও এদিন মেয়র জানান। বলেন, “পুরসভার নিজস্ব ল্যাবে আরটিপিসিআর করার উন্নতমানের বিদেশি যন্ত্র রয়েছে। শুধু বায়োসেফটি ওয়াল তৈরি করে নিলেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কিট নিয়ে ওই মেশিনে পরীক্ষা করা যাবে। পুরসভা আইসিএমআর-এর অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।” স্বাস্থ্যভবনের রিপোর্ট, এদিনও কলকাতায় নতুন করে ৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে মহানগরে এখনও পর্যন্ত ৭১৮ জন করোনা পজিটিভ রোগীর সন্ধান মিলল। এর মধ্যে শতাধিকের বেশি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের।
কোভিড-১৯ (COVID-19) সংক্রমণ নিয়ে সন্দেহভাজনদের লালারস পরীক্ষার জন্য এতদিন বেলেঘাটা আইডি বা বাঙুরে ছুটতে হচ্ছিল। অনেকে বেসরকারি ল্যাবে গেলেও পরীক্ষার আগে নানা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। কিন্তু এবার পুরসভা নিজের খরচেই কনটেনমেন্ট জোনে করোনা আক্রান্তদের প্রতিবেশী ও পরিজনদের পরীক্ষার কাজ শুরু করল। আসলে অনেক মানুষ সন্দেহভাজন হলেও নিজে থেকে করোনার পরীক্ষা করাচ্ছিলেন না, রোগ গোপন করছিলেন। তাই এবার পুরসভাই পাড়ায় পৌঁছে স্বাস্থ্যকর্মীদের তৈরি তালিকা ধরে লালারস সংগ্রহ করছে। গত ২০ এপ্রিল পুরসভা ঘনবসতিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণে বেলগাছিয়া বস্তিতে র্যাপিড টেস্ট শুরু করে। পরদিন মেয়রের নির্দেশে কলকাতার রাজাবাজার, ফুলবাগান, জোড়াসাঁকো, সোনাগাছি-সহ আটটি ওয়ার্ডে র্যাপিড টেস্ট করে। কিন্তু দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে কেন্দ্রের পাঠানো কিট ত্রুটিপূর্ণ, তাই স্থগিত রাখা হল। এরপর চালুর নির্দেশ না আসায় এতদিন আমজনতার টেস্ট করাতে পারছিল না রাজ্য সরকার। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ জানান, “শহর করোনামুক্ত করতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পাড়ায় পাড়ায় টিম পাঠিয়ে প্রতি এক লাখে হাজার মানুষের লালারস পরীক্ষার টার্গেট নিয়েছি।”
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, “হেল্থ সেন্টারের প্যাথলজিক্যাল টেকনিশিয়ানদের লালারস সংগ্রহের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আপাতত ছয়টি টিম গড়ে লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও টেকনিসিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে টিম বাড়িয়ে দৈনিক সংগ্রহের টার্গেট বাড়ানো হবে।” এদিন শহরের অন্যতম কোভিড-১৯ আক্রান্ত ওয়ার্ড ২৪, ২৭, ৫৭. ৬০, ৬২, ৬৫ নম্বরে শিবির করে লালরস সংগ্রহ করেন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। বৃহস্পতিবার ১৪, ২৩, ২৯, ৩৯, ১৩৫ ও ১৪১ এবং শুক্রবার ১১, ২০, ৪০, ৪৪, ৭৫, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডে লালারস সংগ্রহ করা হবে বলে ডেপুটি মেয়র জানান। করোনা মোকাবিলায় অধিক সংক্রমণপ্রবণ শহরের দশটি বরোকে (১ থেকে ১০ নম্বর) বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অভিযানে নামছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যদপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.