অভিরূপ দাস: বিপজ্জনক বাড়ির ছাদ, ফাঁকা জমি আর কেন্দ্রীয় সরকারের অফিস। ডেঙ্গু মরশুমে এই তিন দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পুরসভার। এই মুহূর্তে ডেঙ্গু আক্রান্তর সংখ্যা ২২৫। গত এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পঞ্চান্নজন। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ে বুধবার কলকাতা পুরসভায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরসভার ১৬টি বরোর চেয়ারম্যান।
বৈঠকে উপস্থিত সিংহভাগ বরো চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আর সকলে কথা শুনলেও তল্লাট পরিষ্কার রাখার কথা কানে তুলছে না কেন্দ্রীয় সরকারী অফিস। সেখানে জল জমে। জন্মাচ্ছে এডিস ইজিপ্টাই। কথা কানে না তুলে বিপাকে পড়েছে শতাব্দী প্রাচীন ন্যাশনাল লাইব্রেরি। মিউনিসিপ্যাল কোর্ট জাতীয় গ্রন্থাগারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভার মুখ্য ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রন্থাগারে যত্রতত্র আসবাব পড়ে। প্রায় ৭০ গাড়ি ময়লা জমে। অথচ তারা পুরসভাকে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই ঔদ্ধত্য বরদাস্ত করা হবে না।
তবে জাতীয় গ্রন্থাগার একা নয়, ডেঙ্গুর মশার অনুকুল পরিবেশ তৈরি করার জন্য দায়ী শহরের একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারী অফিস। এদিন ডেঙ্গু-বৈঠকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে সে অভিযোগ করেছেন বরো চেয়ারম্যানরা। দশ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান জুঁই বিশ্বাসের অভিযোগ, নিউ আলিপুরে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে থিক থিক করছে ময়লা। অবস্থা এমনই ওই ক্যাম্পে দশজনের ডেঙ্গু হয়েছে। ৫৮ জন লোক থাকে ক্যাম্পে। সেখানে নিকাশি নালা বন্ধ। বরো চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে বলা হচ্ছে ড্রেন পরিষ্কার করতে গেলে দিল্লি থেকে অনুমতি আনতে হবে। একই অবস্থা নিউআলিপুরের ভারতীয় রেলের সাইডিংয়ের। সেখানেও জমে জল। জবরদখল করে রয়েছেন অনেকে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দু’বছরের আগে জমা জল সরানো সম্ভব নয়।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, দিল্লি থেকে অনুমতির অপেক্ষা করলে হবে না। তড়িঘড়ি কাজে নেমে পড়তে হবে। রেলের সাইডিংয়ে লার্ভা মারতে স্প্রে করুন। ইতিমধ্যেই পুরসভার আতসকাঁচের তলায় কোল ইন্ডিয়া। তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্য কিশোর রাউত অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ওই সংস্থার একাধিক ভাঙা গাড়ি পড়ে রয়েছে তার বরোয়। বৃষ্টিতে সেসব ভাঙা গাড়িতে জল পড়ে জমে। অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, ৪৯৬ এ ধারায় নোটিস দেওয়া হবে কোল ইন্ডিয়াকে। না মানলে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। এদিন বৈঠক শেষে মেয়র জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী কলকাতা বন্দরের একাধিক বন্ধ কল কারখানা। দমদমে ডেঙ্গু বাড়বাড়ন্তের জন্য জেশপের কারখানার দিকে আঙুল তুলেছেন মেয়র। মেয়রের কথায়, ডেঙ্গু নিধনে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার কলকাতা পুরসভাকে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.