সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু আসনের নিরিখে নয়। কলকাতা পুরভোটে (Kolkata Municipal Corporation) তৃণমূলের বিপুল জয় সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকেও রীতিমতো চমকপ্রদ। রাজ্যের শাসকদল কলকাতা পুরসভায় শুধু যে ১৩৪টি আসন জিতেছে তাই নয়, সেই সঙ্গে প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মহানগরের বুকে তৃণমূলের এই বিপুল সাফল্য এককথায় বেনজির।
হিসাব বলছে, রাজ্যের শাসকদল মাত্র আট মাস আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট সাফল্য পেয়েছে। কলকাতায় সূচ পর্যন্ত ফোটাতে পারেনি কোনও বিরোধী দল। কিন্তু বিধানসভার সেই অভাবনীয় সাফল্যের সময়ও তৃণমূল কলকাতায় ভোট পেয়েছিল ৫৭ শতাংশের আশেপাশে। পুরসভায় (KMC) শাসকদল পেল প্রায় ৭২ শতাংশ আসন। অর্থাৎ মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে তৃণমূলের ভোট বাড়ল ১৫ শতাংশ। যা এককথায় অভাবনীয়। আরও চমকে যেতে হয়, গত পুরসভা নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে এবারে ফলাফলের তুলনা করলে। ২০১৫ পুরভোটের তুলনায় তৃণমূল (TMC) এবার ২০টি আসন বেশি পেয়েছে । ভোট বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। গত পুরভোটে মহানগরে তৃণমূল পেয়েছিল ৫০.৬ শতাংশ ভোট। সাধারণত, দশবছর কোনও দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের বিরোধীদের পাশাপাশি লড়তে হয় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সঙ্গেও। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা টপকে কোনও দলের এই পরিমাণ ভোট বাড়ানো মুখের কথা নয়।
কিন্তু কোন জাদুতে এই অভাবনীয় সাফল্য তৃণমূলের?
বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর রাজ্যে তৃণমূলের পক্ষে একটি বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। যা এখনও বজায় আছে। বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Elections) পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে একে প্রতিশ্রুতি পূরণ করা শুরু করায় তৃণমূলের পালে আরও হাওয়া আরও বেড়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সরাসরি প্রভাব পড়ছে কলকাতার পুর নির্বাচনে। বিধানসভা নির্বাচনের আগেও রাজ্যে বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প শুরু করেছে সরকার। বিধানসভার পরও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, দুয়ারে রেশনের মতো প্রকল্প রাজ্যে শুরু হয়েছে। যার সরাসরি সুবিধা সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রকল্পগুলি সরাসরি তৃণমূলকে ভোটব্যাংকে ডিভিডেন্ট দিচ্ছে।
তৃতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সম্পদ ছিলেনই। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক দক্ষতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে তৃণমূলের সংগঠনকে নতুন রূপ দিচ্ছেন, তাতে দলের অন্দরে বেশ কিছু পজিটিভ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দলের মূল সংগঠন থেকে শাখা সংগঠনগুলিতেও স্বচ্ছতা আসছে।
তাছাড়া, কলকাতা পুরসভা যে ভাল কাজ করেছে, সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। শহরের পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত পরিবর্তন বা সৌন্দর্যায়ন, সবক্ষেত্রেই প্রশংসনীয় কাজ করেছে পুরসভা। যার প্রভাব ভোটারদের মধ্যে ছিলই। নিজেদের এই উন্নয়নের কাজে ভর করেই শাসক শিবিরের তাবড় তাবড় নেতারা ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের বড় কোনও নেতা ভোটের ময়দানেই নামেননি। যার ফলে বিরোধী শিবির যে লড়াইয়ের জায়গাতেও নেই, সেটা ভোটের আগেই প্রায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চমক দিয়েছিলেন মমতা। যে সমস্ত বিদায়ী কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সামান্যতম অসন্তোষ ছিল, তাঁদের টিকিট দেননি তৃণমূল নেত্রী। পরিবর্তে আনা হয়েছে নবীন এবং গ্রহণযোগ্য মুখ। প্রার্থী তালিকায় প্রাধান্য পেয়েছেন মহিলারাও। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূলের এই নিপুণতা বাড়তি অ্যাডভান্টেজ দিয়েছে তৃণমূলকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.