নব্যেন্দু হাজরা: তিনি কথা বলতে পারেন না। কিন্তু চোখে দেখতে পান। আর চোখ দিয়েই দেখেন কীভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে কলকাতা (Kolkata)। রাস্তাজুড়ো আলো, সাজানো বাগান, ঘরে ঘরে পানীয় জল। এসবই যে উন্নয়নের প্রতীক – তা বুঝতে পারেন বেশ। তাই ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়ে বুঝিয়ে দেন, তিনি আছেন উন্নয়নের পক্ষেই। জীবনে কথা বলতে না পারার আক্ষেপ থাকলেও গণতন্ত্রের উৎসবে তিনি সর্বদা শামিল হয়েছেন। আর এমন মানুষদের জন্যই বোধহয় গণতন্ত্রের প্রধান উৎসব প্রকৃতই উৎসবের রূপ পায়।
নাম মুকেশ প্রসাদ। বছর চল্লিশের এই ব্যক্তি জন্ম থেকেই কথা বলতে পারেন না (Deaf and dumb)। আকার-ইঙ্গিতে নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। থাকেন বেলেঘাটার (Beleghata) নফরকোলে রোডে। তিন ভাই আর মা – আপাতত এই তাঁর সংসার। দিন কুড়ি আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা মারা যান। বাড়ির কাছেই একটা চা-সিঙাড়ার দোকান চালান তিনি। ভোটের বিকেলে যখন দেখা হল ততক্ষণে ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। দোকানে দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করছেন। ভোট দিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করতেই হাত নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, হ্যাঁ দিয়েছেন। পরে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আলাপ করালেন তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে।
একতলা টালির বাড়ি। থাকেন তিন ভাই আর মা। ভাই ধনঞ্জয় প্রসাদ বললেন, “দাদা ছোট থেকেই কথা বলতে পারেন না। চায়ের দোকান চালান। আমাদের বাবা দিন কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। ভেবেছিলাম, এবার আর পুরসভার ভোট (KMC Election) দিতে যাব না। কিন্তু দাদাই সকালে ইশার করে বলল যে ও যাবে। তাই ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
গোটা দিন ধরেই দু’একটি অভিযোগ ছাড়া মোটের উপর শান্তিতেই ভোট হয়েছে বেলেঘাটা চত্বরে। বিকেল হতেই খুলেছে দোকানপাটও। নির্বাচনের দিন আগে যেমন মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি দেখা যেত, এবার তেমন কিছুই ছিল না মানুষের মধ্যে। বিকেলে মুকেশের দোকানের সামনে বেশ ভালই ভিড় নজরে এল। সেখানে চা বানাচ্ছিলেন মুকেশ। সঙ্গে সিঙাড়া ভাজছেন আরেকজন। বারবার আঙুল তুলে দেখাচ্ছিলেন যে ভোট দিয়ে এসেছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা আশুতোষ দুবে বলেন, “ছোট থেকেই দেখছি এই ছেলেটাকে। কথা বলতে পারে না। তাই আমরা সবাই স্নেহ করি। কয়েকদিন আগে ওর বাবা মারা গিয়েছে। দোকানও অনেকদিন বন্ধ ছিল। ক’দিন হল খুলছে। আজ সকালে দেখলাম, ও ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।” দিনভর ভোটের লাইনে দাঁড়ানো শহরবাসীর মধ্যে মুকেশকেই সবচেয়ে আনন্দিত দেখাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.