কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে আর্থিক সংকটে নাগরিকদের বকেয়া সম্পত্তি করে সুদ ও জরিমানা মকুব করে বিশেষ ছাড় দিয়ে কিছুটা সুরাহা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা (KMC)। এ বছর এক লপ্তে নয়, মাসের বকেয়া পুরকরের বিলের উপর ১০০ শতাংশ সুদ ও জরিমানা মকুব করা হচ্ছে। তাই সম্পত্তি করদাতাদের বকেয়া পুরকরের সুদ ও জরিমানা থেকে রেহাই দিতে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী রাজ্য সরকারের সম্মতি নিয়ে ফের ‘ওয়েভার স্কিম’ চালু করছে।
পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলেই কলকাতার নাগরিকদের বিশেষ ছাড়ের সুবিধা ঘোষণা করা হবে।” নবান্ন সূত্রে খবর, ১ আগস্ট থেকে সুদ ও জরিমানায় ছাড়ের সুবিধা পাবেন মহানগরের বাসিন্দারা। যেহেতু পুরমন্ত্রী নিজেই পুরসভার মুখ্য প্রশাসক এবং ওয়েভার স্কিমটি (Weaver Scheme) চালু হলে কলকাতা পুরসভা আর্থিকভাবে লাভবান হবে, তাই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে আপত্তি করবেন না বলে অনুমান।
এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভার বকেয়া পুরকরের পরিমাণ প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা। আগেরবার ওয়েভার স্কিম চালু করায় পুরসভায় তহবিলে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা বকেয়া সংগ্রহ হয়েছিল। লকডাউনের কারণে অনেকেই গত তিন-চার মাস বকেয়া পুরকর জমা দিতে পারেননি। এছাড়া শহরের অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও মার্চ মাসের শেষে কর জমা দেন। কিন্তু এবার করোনা আবহে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সম্পত্তি কর জমা দেয়নি।
উলটোদিকে, এই কয়েক মাস কর আদায় না হওয়ায় পুরসভার আর্থিক ভাণ্ডার প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। তাই ভোটের বছরে একদিকে নাগরিকদের সুবিধা অন্যদিকে নিজের আর্থিক সংকট কাটাতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া সম্পত্তিকরের ক্ষেত্রে ৯ মাসের জন্য ছাড়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ যদি প্রথম ছয় মাসের বকেয়া কর একসঙ্গে জমা করেন তবে তাঁকে ১০০ শতাংশ সুদ ও জরিমানা মকুব করা হবে। আবার সপ্তম থেকে নবম, এই তিন মাসের কর একসঙ্গে জমা দিলে জরিমানা ৯৯ শতাংশ এবং সুদ ৬০ শতাংশ মকুব করা হবে।”
করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের জেরে পুরসভার আয় গত মে মাস পর্যন্ত কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। জুন মাস থেকে বকেয়া কর আদায়ে পুরসভার কর আদায় বিভাগ ঝাঁপিয়ে পড়লেও তেমনভাবে সাড়া মিলছে না। অনলাইনের পাশাপাশি শহরজুড়ে ২০ টি সেন্টারে পুরকর জমা দিতে আসা নাগরিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু হলেও পুরসভার কোষাগারে তেমন প্রভাব পড়েনি। কলকাতায় করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার পাশাপাশি আমফানের ক্ষতি সামাল দিতে নাগরিক পরিষেবার একাধিক ক্ষেত্রে পুরসভার খরচের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। পুরকর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুদানও নিয়েছে পুরসভা। তাই বকেয়া কর আদায়ে ছাড় ঘোষণা করে নিজস্ব আর্থিক তহবিলের হাল ফেরাতে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে পুরসভা। পুরমন্ত্রীর আবেদন, নাগরিক পরিষেবা উন্নত রাখতে সুদ ও জরিমানা মকুবের সুযোগ নিয়ে বকেয়া কর জমা দিয়ে পুরসভার পাশে দাঁড়ান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.