ফাইল ছবি।
কৃষ্ণকুমার দাস: প্লাস্টিক সরিয়ে কাপড় বা অ্যালুমিনিয়ামের শিট দেওয়া কোনও স্টল কলকাতার ফুটপাথে রাখা যাবে না। একমাত্র চাকা লাগানো পুরসভার স্টলই ফুটপাথের পাশে রেখে ‘হকিং’ করতে পারবেন পুলিশের ভিডিও সমীক্ষায় থাকা হকাররা। পুরসভার নিজস্ব স্টলটির মডেল চূড়ান্ত করার পর শুক্রবার পুরভবনে একথা জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
গড়িয়াহাটের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এদিনই আবার ফরেনসিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। ওই রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, গড়িয়াহাটে নামী বিপনির বিদ্যুৎ সংযোগে বড়সড় গাফিলতি ছিল। চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন লোড চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লোড অনুযায়ী বৈদ্যুতিক পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো হয়নি। তাই ফিডার বক্স থেকে মিটার বক্সের মধ্যে দুর্বল তার বহন ক্ষমতা সহ্য করতে পারেনি। গলদ ছিল সেখানেই। আগুনের ফুলকিও ছড়ায় সেই অংশ থেকে। ইতিমধ্যে দমকল আলাদা করে এফআইআর দায়ের করেছে। পুলিশ ও পুরসভাও আলাদা তদন্ত করেছে। স্বভাবতই ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে আসার পরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। মেয়রের ঘোষণা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তর কলকাতার হাতিবাগান,শ্যামবাজারে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের উদ্যোগে প্লাস্টিক খুলে ফেলেন হকাররা। কিন্তু অ্যালুমিনিয়ামের শিট দিয়ে পুরনো স্টলের উপরের ছাদ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেয়র জানান, “পুরসভা থেকে তৈরি স্টলের মাপের সঙ্গে মিলিয়েই নতুন স্টল হবে। যেমন খুশি, যত খুশি জায়গা নিয়ে স্টল করা যাবে না। বর্ষায় ক্রেতারা যাতে ভিজে না যান, সেজন্য চৌকো সাদা রঙের ছাতা দেওয়া হবে স্টলের সামনে। যখন বর্ষা থাকবে না, তখন তা গুটিয়ে রাখা যাবে।”
পুরসভা সূত্রে খবর, ছয় ফুট বাই চার ফুট মাপের লোহার পাত দিয়ে তৈরি স্টল হবে নীল রঙের। সামনে সাদা ছাতা, পিছনে নীল রঙের চাকা লাগানো গাড়ি। সার দিয়ে নীল-সাদা স্টলগুলি দেখতে মনোরম হবে বলে দাবি করলেন মেয়র। পুরসভার স্টোর বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে গত তিনদিন ধরে যে স্টলটি চূড়ান্ত করেছেন, এদিন তার সামান্য পরিবর্তন করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পরিবর্তিত স্টলটি ছয় বাই চার ফুট হচ্ছে। মাটি থেকে মোট উচ্চতা পাঁচ ফুট। মাটি থেকে দু’ফুট উচ্চতায় একটা বক্স হচ্ছে। তার ভিতরে পণ্য রাখতে পারবে। ওই বক্সেই বসেই বিক্রিবাটা করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। আসলে শহরে ফুটপাথ ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাস্তা আটকে ক্রেতাকে কেনাকাটা বন্ধ করতে জন্য চাপ দেওয়ার কৌশলে এবার ঘুরপথে হকার নিয়ন্ত্রণের পথে যাচ্ছে কলকাতা পুরসভা।
গড়িয়াহাট অগ্নিকাণ্ডের পর বলা হয়েছিল, হকারদের দেওয়া প্লাস্টিকের ছাউনি বিপদ বাড়িয়েছে। তা যে সত্যি, সে বিষয়ে ফরেনসিক তদন্তকারীরাও একমত। রাজ্য সরকার হকারদের হঠিয়ে দিয়ে তাঁদের রুটিরুজি বন্ধের বিপক্ষে। ঘটনার পর ফরেনসিক টিম গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছিল। সেই নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এখানকার বড় দোকানে যে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছিল, তার প্রাথমিক বহন ক্ষমতার চেয়ে লোড ক্রমশ বেড়েছে। আলো, এসি-সহ নানা সরঞ্জাম বৃদ্ধি পেলে লোড বাড়ানোর আবেদন করে পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হয়। নিয়মিত সেটা করা হয়নি। বস্তুত এই কারণেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে বলে দাবি করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.