অণ্বেষা অধিকারী: তিনি ধরেছিলেন, ”হাম, রহে ইয়া না রহে কাল”। মোহিত হয়ে সেই গান শুনছিলেন দর্শকরা। কিন্তু এই গানই যে তাঁর শেষ গান হয়ে যাবে তখন কে আর জানতেন! লাইভ কনসার্ট সেরে হোটেলে ফেরার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জনপ্রিয় গায়ক কেকে। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে জানিয়ে দেওয়া হয় দেরি হয়ে গিয়েছে। কেকে আর নেই। শিল্পীর জীবন কী এরকমই! এতটাই ক্ষণস্থায়ী!
কেকের (KK) মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহর কলকাতা অদ্ভুত এক ঘোরে ডুবে। সেই ঘোর কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যে অসম্ভব! সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা। চিকিৎসকমহলেও আলোচনা। ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা জারি হয়েছে। যাঁরা জনপ্রিয় শিল্পীর লাইভ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁরাও স্তম্ভিত। এই আকস্মিক মৃত্যুর পিছনের কারণ কী? কেকে-র শেষ কনসার্টের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ্ছেন, আয়োজনেই গলদ ছিল। সেই প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, চূড়ান্ত অব্যবস্থা ছিল অনুষ্ঠানের আয়োজকদের তরফে। এমনকী, অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে ইট, পাথর, কাঁচ ছোঁড়া হয়। আয়োজকদের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ে কনসার্ট দেখতে আসা জনতা।
এক কলেজ পড়ুয়া দেখতে গিয়েছিলেন কেকের কনসার্ট (KK’s Last Concert)। তিনি জানিয়েছেন, “অনেকের কাছেই পাস ছিল। কেউ কেউ বিনামূল্যেও পাস পেয়েছিলেন। আবার অনেকেই পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও অনুষ্ঠানের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগে পাস ছাড়াই অনেকে নজরুল মঞ্চে ঢুকে গিয়েছিলেন। ফলে আয়োজকদের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি।” সেই ছাত্রী আরও জানিয়েছেন, ধাক্কাধাক্কির ফলে অনেকেই আহত হন। এমনকী, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মাধ্যমে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিলেন আয়োজকরা।
সেই ছাত্রী বলেন, “পাস থাকা সত্ত্বেও হলে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না আয়োজক ভলান্টিয়াররা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে অধৈর্য হয়ে পড়েন সকলেই। তখনই আয়োজকদের দিকে পাথর ছোঁড়া হয়। পালটা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চালায় আয়োজকরা। সেই গ্যাসের ফলে অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন।” জায়গা থাকা সত্ত্বেও আয়োজকরা ঢুকতে দেয়নি বলেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সেই ছাত্রীর।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য সেরকম বিপত্তি ঘটেনি। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের ফলে ক্রমশ গরম বাড়তে থাকে হলের ভিতর। সেই ছাত্রী জানিয়েছেন, এসি চালানো হয়েছিল হয়তো। কিন্তু তাতেও প্রচণ্ড গরম লাগছিল সকলের। তিনি বলছেন, “কেকে বারবার বলছিলেন, পিছন দিকের আলো নিভিয়ে দিতে। কারণ আলোর ফলে বেশি গরম লাগছিল। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও আলো নেভানো হয়নি।”
অনুষ্ঠান চলাকালীন কি অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে (Singer KK)? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছেন, “প্রচণ্ড গরমের কারণেই ভীষণ ঘামছিলেন কেকে। বারবার জল খাচ্ছিলেন।” অসুস্থ বোধ করলেও মঞ্চে কেকে-কে দেখে মনেই হয়নি তিনি শারীরিক দিক থেকে সুস্থ বোধ করছেন না। প্রসঙ্গত, গতকাল কেকের শোয়ের আগেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন গায়ক রূপঙ্কর বাগচি। তিনি বলেছিলেন, অনেক বাঙালি শিল্পী রয়েছেন যাঁরা কেকের থেকে ভাল গান করেন। তাঁদের নিয়ে কেন এত মাতামাতি হয় না? সেই প্রসঙ্গে কেকে অনুরাগী পড়ুয়াটি বলেছেন, “হেটাররা তো অনেক কিছুই বলবে। কিন্তু তাতে পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই।”
গতকালের কনসার্টে অনেকগুলি গান গেয়েছিলেন কেকে। কিন্তু এমন সুরেলা পারফরম্যান্সের পরে সবকিছুই কেমন যেন বেসুরো হয়ে গেল। ভেঙে পড়েছেন কেকে অনুরাগীরা। গোটা দেশ স্তম্ভিত। সোশ্যাল মিডিয়া আবেগে ভাসছে। বেজে চলেছে কেকে-র সব হিট গান। ভক্তদের কাছে কেকে ঈশ্বর। ঈশ্বরের কি মৃত্যু (KK Death) হয়! থুড়ি, বলা ভাল, শিল্পীদের মৃত্যু হয় না। ভক্তদের হৃদয়ে তাঁরা বেঁচে থাকেন চিরকাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.