স্টাফ রিপোর্টার: রেল (Indian Railways) চলাচল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় দৌরাত্ম্য বাড়তে পারে ‘কিশোর গ্যাং’য়ের। এবার সেই চিন্তা নতুন করে ঘুম কেড়েছে গোয়েন্দাদের। পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনের সময় থেকে ট্রেন বন্ধ হওয়ার ফলে কিশোর গ্যাংয়ের যাতায়াত কমেছিল কলকাতায় (Kolkata)। তাই জানালার ভিতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে ল্যাপটপ, মোবাইল বা মানিব্যাগ চুরি অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু ফের ট্রেন চালু হওয়ার পর এদের দৌরাত্ম্য আবার বাড়তে পারে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের কারও বয়স ৮, কারও ১০ বা ১২, আবার কারও ১৬ বছর। এরা প্রত্যেকেই পাইপ বেয়ে ওঠানামা করতে ওস্তাদ। দক্ষিণের নিউ গড়িয়া থেকে শুরু করে বালিগঞ্জ বা পার্ক সার্কাস পর্যন্ত যত স্টেশন আছে, তার আশপাশের অঞ্চল বা আরও একটু দূরে বাড়িগুলিই মূল লক্ষ্য এদের। তাদের বেশি পছন্দ পেয়িং গেস্টের যুবক-যুবতীরা, যাঁরা রাত পর্যন্ত মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ করে একটু বেশি রাতে ঘুমাতে যান। দোতলা, তিনতলা বা আরও উঁচু তলায় থাকার কারণে অনেক সময় দরজা-জানালা তাঁরা বন্ধ করেন না। সেই সুযোগে নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রেন পাইপ বেয়ে তরতর করে উঠে পড়ে বারান্দায়। অনেক সময় তাদের হাতে থাকে আঁকশি। দরজা খোলা থাকলে ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতর। দরজা বন্ধ অথচ জানালা খোলা থাকলে ল্যাপটপ, মোবাইল, মানিব্যাগ আঁকশি দিয়ে কাছে টেনে এনে তা নিয়ে নেমে পড়ে নিচে।
সূত্রের খবর, এই গ্যাংয়ের মাথা ও সদস্যদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 paraganas ) ঘুটিয়ারি শরিফ, মল্লিকপুর, তালদি, জীবনতলার বাসিন্দা। এতদিন ট্রেন বন্ধ থাকায় কলকাতায় তাদের যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ দেখা গিয়েছে, সাধারণভাবে শেষ ট্রেনে ওই বালক ও কিশোররা কলকাতায় এসে বিভিন্ন স্টেশনে নামে। দক্ষিণ কলকাতা দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন জায়গা তাদের বিশেষ পছন্দের। এখানেই ল্যাপটপ, মোবাইল বা অন্য কিছু হাতিয়ে নিয়ে ভোরের ট্রেনে উঠে পালিয়ে যায় তারা। এতদিন পর ট্রেন চালু হলে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা ফের মাঠে নামতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না লালবাজারের গোয়েন্দারাও।
এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, গত কয়েক মাসে বানজারা গ্যাংয়ের (Banjara Gang) উৎপাত কলকাতায় বেড়েছিল। যদিও পুলিশের তৎপরতায় পুজোর আগেই এই দুষ্কৃতীদের দমন করা গিয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারেও পুলিশ যথেষ্ট সচেতন। কারণ, এর আগেও দক্ষিণ শহরতলির কিছু থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিল বেশ কয়েকজন বালক ও কিশোর। তাদের অনেককে হোমেও পাঠানো হয়। যদিও এর মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে বাড়িতেই রয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। এই বালক বা কিশোররা চুরি করলেও তাদের পিছনে রয়েছে অন্যান্য মাথা। বিশেষ করে এই চোরাই জিনিস কেনার জন্য ঘুটিয়ারি শরিফ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি জায়গায় রয়েছে ‘রিসিভার’। তারা অপেক্ষাকৃত কম দামে দামি ল্যাপটপ ও মোবাইল কেনে। গোয়েন্দারা দেখেছেন, এই টাকা দিয়ে কখনও কিশোররা তিন পাত্তির মতো তাসের জুয়া খেলে, আবার কখনও বা বিভিন্ন ধরনের নেশা করে। বিশেষ করে একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের আঠার গন্ধ শুঁকে নেশা করা তাদের মধ্যে অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ট্রেন চলার সুযোগ নিয়ে যাতে এই বালক বা কিশোররা উৎপাত না করে, তার জন্য পুলিশ গভীর রাত থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নজরদারি শুরু করছে। একইসঙ্গে স্টেশনগুলির আশপাশে তাদের উপর নজরদারির জন্য বিশেষ টহল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.