রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘সেই দিনটার কথা এখনও মনে পড়লে শিউরে উঠি দাদা। গায়ের রোম খাড়া হয়ে ওঠে।’ কথাগুলি বলছিলেন পোস্তা এলাকার শীতলা মন্দিরের পুরোহিত কমল চক্রবর্তী। পোস্তা রাজবাড়ির পুরোহিত বিষ্ণু চক্রবর্তীর ছেলে কমল। প্রায় ৩৪ বছর ধরে মন্দিরে পুজো করছেন। ২০১৬-এর ৩১ মার্চের স্মৃতি এখনও টাটকা তাঁর কাছে।
সেদিন শীতলা অষ্টমীর পুজো চলছিল মন্দিরে। প্রথমে প্রচণ্ড জোরে কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ পান তাঁরা। তারপর চিৎকার, আর্তনাদ। মন্দির থেকে ছুটে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন সেই ভয়ঙ্কর ছবি। গণেশ টকিজে বিবেকান্দ রোডের উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল পোস্তা উড়ালপুল। উত্তর কলকাতার কালীকৃষ্ণ টেগোর স্ট্রিট, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট কিংবা মহর্ষি দেবেন্দ্র রোড। পুরনো কলকাতার বনেদিয়ানার প্রতীক বিশাল বিশাল দালানবাড়ি। আবার এই এলাকাকে বিশ্ব চেনে ঠাকুরবাড়ি দিয়েও। আবার এই উত্তরেই রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ি, ভূতনাথ মন্দির, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি।
বৃহস্পতিবারই শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার। রবিবার নির্বাচন। ভোটের উত্তাপ এই উত্তর কলকাতাতেও। যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনের মতো উত্তর কলকাতায় ভোটে এবার ইস্যু পোস্তার ভেঙে পড়া উড়ালপুল নয়। তবে ভোটের ইস্যু না হলেও এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে অবশ্য সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। গণেশ টকিজের কাছে ব্রিজের যে অংশটি ভেঙে পড়েছিল তার আগে ও পরে বেশ কিছু অংশ এখনও ঢাকা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচলতি নাগরিকরদের আশঙ্কা, বাকি ঢাকা অংশটুকুও যে কোনওদিন ভেঙে পড়বে। হাওড়ার বৃন্দাবন মল্লিক লেনের বাসিন্দা সুদীপ দলুই কর্মসূত্রে নিয়মিত বড়বাজারে যান। সুদীপের কথায়, ‘যখন উড়ালপুলের ঢাকা অংশের নিচে দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি তখন উপরে চোখ পড়লে ভয় হয়। মনে হয় আবার ভেঙে পড়বে না তো। মনে পড়ে যায় সেদিনের সেই ভয়ংকর ঘটনার কথা।’ ভোটের ইস্যু না হলেও তিন বছর আগের সেই ভয়ংকর স্মৃতি বহন করে এখনও রয়ে গিয়েছে সেই পোস্তা উড়ালপুল।
গত ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল ভগ্ন এই উড়ালপুল। আর এই ইস্যুকে সামনে রেখে গত বিধানসভায় জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী স্মিতা বক্সিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিলেন বিজেপির রাহুল সিনহা। উড়ালপুলের ধাক্কায় মাত্র ছ’হাজার ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। এবার ইস্যু অন্য হলেও চাপা গেরুয়া হাওয়া কিন্তু বইছে উত্তরেও, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে ৯৬ হাজার ২২৬ ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপবাবু পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৮৭ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল সিনহা পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬১ ভোট। লোকসভার নিরিখে জোড়াসাঁকো কেন্দ্রটিতে লিড ছিল বিজেপির। উত্তর কলকাতার ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫০টিই তৃণমূলের দখলে। আবার গত ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভাতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল।
কিন্তু বেশ কিছু এলাকা, বিশেষ করে অবাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি এবার কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে শাসকদলকে। তবু এই কেন্দ্রে এবার মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নকে সামনে রেখেই জয়ের লিড বাড়ানোর লক্ষ্যে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বিজেপির রাহুল সিনহা এবার আত্মবিশ্বাসী তাঁর জয় নিয়ে। রাহুলের সমর্থনে রোড-শো করেছেন স্বয়ং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সভা করে গিয়েছেন রাজনাথ সিংও। লড়াইয়ে তৃতীয়স্থানে থেকেই ভাঙা সংগঠন নিয়েও প্রচারে খামতি দেননি সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা (বোস) ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.