পারমিতা পাল: দেশজুড়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল দেশবাসী। আক্রান্ত হচ্ছেন পরিবারের একাধিক সদস্য। আর করোনার এই নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ এতটাই দুর্বল করে দিচ্ছে যে সংক্রমিত বিছানা থেকে মাথা তুলতে পারছে না। ফলে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পেট ভরানোও কঠিন হয়ে পড়ছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াল ‘কেডিস ডেন কিচেন’। করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের উপর ভরসা করেই এগিয়ে এসেছেন তাঁরা। দিনরাত জুড়ে চলছে তাঁদের কর্মযজ্ঞ।
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া, যাদবপুর, গল্ফগ্রিন এবং নেতাজিনগর এলাকায় করোনা আক্রান্ত পরিবারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে অল্প মশলা দিয়ে বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে দুপুর ও রাতের খাবার। নিয়ম মেনে থাকছে হাই প্রোটিনে সমৃদ্ধ আমিষ খাবার। কোভিডবিধি মেনে সেই খাবার প্যাকেট হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। তাও আবার বিনামূল্যে। গোটা বিষয়টির মূল উদ্যোক্তা কৌস্তভ সেনগুপ্ত। যিনি নিজের হাতেই সারছেন রান্না। কোনও দিন ভাত, মাছ বা মাংস কিংবা ডিম। থাকে ডাল, ভাজা। কোনওদিন স্বাদ বদল করতে যুক্ত হয় তরকারিও। তারপর চলে সেই খাবার প্যাকিং করার পালা। গত ২৬ দিন ধরে এভাবেই কাজ করে চলেছেন তাঁরা।
কৌস্তভবাবু, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং এই উদ্যোগে শামিল হওয়া আরও কয়েকজন মিলে চলে খাবার প্যাকিংয়ের কাজ। ডিজপোজেবল কন্টেনারে খাবার ভরা হয়। তার পর গাড়ি চেপে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় খাবার। পুরো কাজটাই হয় কোভিডবিধি মেনে। কীভাবে মিলবে এই পরিষেবা? এ প্রসঙ্গে ‘কেডিস ডেন কিচেন’-এর মূল উদ্যোক্তা কৌস্তভবাবু জানান, “কোভিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। কোনও করোনা আক্রান্ত পরিবার যদি রান্না করতে না পারেন, তাহলে নির্দ্বিধায় আমাদের জানান। আমরা দু’বেলার খাবার পৌঁছে দিয়ে আসব আপনার বাড়িতে। যতদিন সামর্থ্য থাকবে ততদিন এই কাজ চালিয়ে যাব।”
খাবারের বিনিময়ে অর্থ নিচ্ছে না ‘কেডিস ডেন কিচেন’। করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য। তার পর কেউ এই পরিষেবায় যুক্ত হতে চাইলে তাঁরা তা করতে পারেন। কে বলেছে তিলোত্তমা তাঁর মানবিকতা হারিয়ে ফেলেছে? কৌস্তভবাবুর মতো মানুষরা যতদিন এ শহরে থাকবেন ততদিন মানবিকতার নজির গড়বে শহর কলকাতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.