অর্ণব আইচ: তাঁরা নিরাপদ থাকার ভরসা পেয়েছেন কলকাতায়। কিন্তু কলকাতা বা এই রাজ্যের বাইরে তাঁরা কতটা নিরাপদ, তা এখনও জানেন না শালবিক্রেতা কাশ্মীরিরা। অথচ কলকাতা হয়ে বাড়ি ফিরতে গেলে যে তাঁদের যেতে হবে বেশ কয়েকটি রাজ্য ঘুরে। তাই কলকাতা থেকে সরাসরি জম্মুতে না গিয়ে বাড়ি ফেরার রুট বদলাচ্ছেন কাশ্মীরের ওই বাসিন্দারা। কেউ বা রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি ও সেখান থেকে বিমানে। আবার কেউ বা ট্রেনে চড়ার ‘ঝুঁকি’ই নিচ্ছেন না। পুরো যাত্রাই সারতে চাইছেন বিমানে।
কাশ্মীর থেকে কলকাতায় আসা এই শালবিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই আসছেন ২৫ বা ৩০ বছর ধরে। আবার কারও বাবা শাল বিক্রি করতে আসতেন। এখন কাশ্মীর থেকে শাল, সোয়েটার বা অন্যান্য গরম জামাকাপড় কিনে তাঁরা এই শহরে এসে ব্যবসা করেন। অনেকেরই রয়েছে ধরাবাঁধা খদ্দের। গত ২৮ বছর ধরে কলকাতায় আসছেন শাহিদ খান। শ্রীনগরের এই স্কুল শিক্ষক শীত পড়লেই কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। মাস তিনেকের জন্য দক্ষিণ কলকাতার হাজরা রোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি জানান, পুলওয়ামার ঘটনার পর তাঁর বাড়ির লোকেরা ভয় পেয়ে যান। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও শুনেছেন যে, কলকাতায় কয়েকজন কাশ্মীরির উপর হামলা চালানো হয়েছে। যদিও তিনি নিজেই বাড়ির লোকেদের নিশ্চিন্ত করেন। বাড়ির লোকেদের জানান, বেহালা এলাকায় কয়েকজন শাল বিক্রেতার সঙ্গে গোলমাল হয়েছিল বলে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা খবর পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বা তাঁর পরিচিতরা যে এলাকাগুলিতে থাকেন, সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি।
[ বাজ পড়ে টালিগঞ্জের কারশেডে আগুন, ফের ব্যাহত মেট্রো চলাচল ]
অন্য একজন কাশ্মীরি শালবিক্রেতা সোহেল আলি জানান, কলকাতায় কাশ্মীরিদের উপর কোনওরকম হামলা এর আগে কখনও হয়নি। যদিও পুলিশ ও প্রশাসন আশ্বাস দেওয়ার পর তিনি নিশ্চিত। গত ১৫ বছর ধরে তিনিও আসছেন কলকাতায়। শাহিদ বা সোহেলের মতে, তাঁদের ফেরার সময় হয়েছে। মার্চের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই তাঁরা বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা কলকাতা বা এই রাজ্যে নিরাপদ হলেও রাজ্যের বাইরে তাঁরা কতটা নিরাপদ, তা তাঁরা জানেন না। অথচ তাঁদের জম্মু পৌঁছতে হবে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব হয়ে। সেই ক্ষেত্রে জম্মুর ট্রেনে সরাসরি যাওয়াটা তাঁদের পক্ষে কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে তাঁরা ধন্দে পড়ে যান। কারণ, ওই রাজ্যের কোনও বাসিন্দা ট্রেনে কাশ্মীরিদের দেখলে কোনও সমস্যা করবেন না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না তাঁরা। শাহিদ জানান, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরার জন্য রাজধানী এক্সপ্রেসে যাবেন দিল্লি। সেখান থেকে বিমানে শ্রীনগর। সোহইল-সহ আরও কাশ্মীরিদেরও পছন্দ এই রুট। তাঁদের ধারণা, রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে সাধারণত সংরক্ষণ ছাড়া যাত্রীরা ওঠেন না। এ ছাড়াও বিমানে নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে বেশি।
[ প্রেসিডেন্সি ও দমদম জেল থেকে পাক-বন্দিদের সরিয়ে দিল রাজ্য সরকার ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.