সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়: উড়ালপুলের উপর অশ্বত্থ গাছ! বিশ্বাস করতে অসুবিধে হলেও, এটাই বাস্তব। গড়িয়া থেকে বারুইপুরগামী রাস্তার উপর কামালগাজি-ইএম বাইপাস সংলগ্ন উড়ালপুলটিতে যদি আপনি ওঠেন, তাহলেই দেখতে পাবেন, ব্রিজের ধার ঘেঁষে ছোট-বড় গাছের সারি। তার মধ্যে লম্বা ঘাসের জঙ্গল যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অশ্বত্থ ও নানা জংলি গাছের সারি!
সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকটি ব্রিজ ভেঙে পড়ার সাক্ষী রয়েছে মহানগর এবং সেই আতঙ্কের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি শহরবাসী। এই পরিস্থিতিতে সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিয়ে চারদিকে শোরগোল এবং পুজোর আগেই পালা করে ঢাকুরিয়া ব্রিজ (শ্রীচৈতন্য সেতু), কালিকাপুর-যাদবপুর ব্রিজ (জীবনানন্দ সেতু) বন্ধ করে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করা হয়েছিল। পুজোর ঠিক মুখেই প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অসুবিধে হলেও, মানুষ হাসিমুখে তা মেনে নিয়েছিলেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এবং বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে। এমনকী, তুলনামূলকভাবে নতুন ইএম বাইপাসের বাঘাযতীন উড়ালপুলটিতে যে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছিল, তাও সারানো হয়েছে সম্প্রতি।
কিন্তু কামালগাজি ব্রিজের ছবিটি একেবারেই নতুন। মাত্র ৭ বছর আগে তৈরি হয়েছে গড়িয়া থেকে বারুইপুরগামী এই উড়ালপুল। অথচ তারই মধ্যে এখানে জংলি গাছের চারা। এমনিতেই অশ্বত্থ গাছের চরিত্র অনুযায়ী, তা যত বাড়তে থাকে, ততই বিপজ্জনক হতে থাকে। কামালগাজি ব্রিজ দিয়ে যাঁরা নিত্য যাতায়াত করেন, তাঁদের রোজকার অভিজ্ঞতা এইই যে উড়ালপুলের উপর পুলিশকর্মীরা নিয়মিত নিজেদের কাজ করেন। তাঁদের চোখেও কি পড়ে না এই গাছগাছালির উপস্থিতি?এই প্রশ্নের উত্তর মেলার জো নেই। পুলিশকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে বৈধ কাগজপত্র পরীক্ষা করতেই ব্যস্ত। নিয়মিত আদায় করা হয় রোড ট্যাক্সও। এ পথে গাড়ি নিয়ে নিত্য যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সেই রোড ট্যাক্সের অঙ্কও বেড়েছে। সেই টাকা আদায় সত্ত্বেও উড়ালপুলের সাম্প্রতিক কী পরিস্থিতি, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। যদি থাকত, তাহলে এতদিনে বিষয়টি এর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নজরে আনা হত। এমনই বলছেন নিত্যযাত্রীরা।
সভ্যতা উন্নত হবে, শহরজুড়ে পাল্লা দিয়ে বাড়বে উড়ালপুল আর সেতুর সংখ্যা। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রশাসন তথা শহরবাসী সকলেরই উপলব্ধি এই যে, ধারাবাহিকভাবে উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণে নজর দিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা আবশ্যক। নইলে অশ্বত্থ চারা যখন বৃক্ষে পরিণত হয়ে ক্রমশ কামালগাজি উড়ালপুলের মূল ভূমিতে ফাটল চওড়া করে একটি বিপর্যয় ঘটিয়েই ফেলবে। তখনই কি টনক নড়বে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.