ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আবার চিঠি। ফের আক্রমণ। কল্যাণ ও রাজ্যপাল, দুই পক্ষেরই। প্রথমে চিঠি দিয়ে রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড়কে তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রিজয়েন্ডার’ পাঠান। পালটা চিঠিতে রাজ্যপাল অবশ্য এই পর্ব শেষ করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন এটাই ‘ফাইনাল’ চিঠি। আবেদন করেছেন, ‘এবার পরস্পরের বিরুদ্ধে ছুরি মারা বন্ধ হোক’।
মঙ্গলবারের পর বুধবার সকালে পালটা ফের এক পাতার চিঠি রাজ্যপালকে লেখেন কল্যাণ। প্রথমেই মনে করিয়ে দেন আগেরদিনের চিঠিতে কল্যাণ রাজ্যপালকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র সেজে কথা বলে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। তার বিরোধিতা রাজ্যপাল চিঠিতে করেননি। কল্যাণের মন্তব্য, “এ থেকেই প্রমাণিত আপনি আমার কথার বিরোধিতা করছেন না। আমার অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন।” এর পরেই ধনকড় নিজের মর্যাদা ও সীমানা লঙ্ঘন করছেন বলে ফের তোপ দাগেন। বলেন, “রাজ্য আর কেন্দ্রের সম্পর্ক খারাপ করতে আপনি উসকানি দিচ্ছেন। রাজ্যের মধ্যে সরকারের সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর কোনও অধিকার সংবিধান আপনাকে দেয়নি।”
কল্যাণ তার দলনেত্রীকে আড়াল করতে এবং রাজ্যের ব্যর্থতা ঢাকতেই যে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন তা লিখে এদিন সকালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ করেন রাজ্যপাল। নিজের পাঠানো চিঠিতে কল্যাণ তার উল্লেখও করেছেন। সঙ্গে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের যেভাবে আক্রমণ করে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করছেন তার বিরুদ্ধে আমি সরব হয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে আড়াল করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে যা করছে তার কোনও বিকল্প হয় না।” সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এবং আরেক বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। নিজের চিঠিতে দিন সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন কল্যাণ। শেষে কেন্দ্র সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকা নেওয়ার বদলে রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভূমিকা নিতে আবেদন করেছেন কল্যাণ।
প্রত্যুত্তরে রাজ্যপাল ফের একবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ টেনেছেন। তারপরই আক্ষেপের সুরে বলেছেন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল তাকে করোনা প্রসঙ্গে নানা তথ্য দিলেও তৃণমূল কংগ্রেস বা রাজ্য সরকার কেউই তাকে কোনও তথ্য দেয়নি। বলেছেন, “তেমন হলে প্রয়োজনীয় নানা পরামর্শ নিয়ে রাজ্যের কল্যাণে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া যেত। সমালোচনার বদলে আমি পরামর্শ নিয়ে কাজ করায় বিশ্বাসী।” শুধু করোনা মোকাবিলার প্রসঙ্গ টেনেই নয়, রাজ্যে কেন্দ্রের দলের আসা এবং তাদের কোনও রকম সহযোগিতা না না করার অভিযোগও তুলেছেন রাজ্যপাল।
শেষ পর্বে কল্যাণকে বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে কাজ করার আবেদন জানিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, “সাজিয়ে দেওয়া কথা না বলে বরং রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর দিন। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে কথা না বলাই ভাল। এখন রাজ্যপালকে ছুরি মারার সময় নয়। বরং মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করুন রাজ্যের স্বার্থে কী কী করা উচিত।” তিন পাতার চিঠির গোটা অংশটা টুইট করে আবার তিনি আবেদন করেছেন, “পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই না করে বরং করোনা মোকাবিলায় আমরা লড়াইয়ে নামি। পরস্পরের বিরুদ্ধে ছুরি মারা বন্ধ হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.