স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা পারলেও ঠেকাতে পারল না হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কালীপুজোর রাতে দেদার বাজি ফাটল দুই জেলায়। দূষিত বাতাস ঢুকল এ শহরে। যার জেরে কালীপুজোর রাতে তিলোত্তমার বাতাস ছিল মারাত্মক দূষিত। রবিবার রাতের কলকাতার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বলছে, শহরের বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ১৪১। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ গুণ বেশি।
কোন শহর কত বেশি দূষিত, তা বোঝার জন্য মাপতে হয় বাতাসে বিপজ্জনক দূষণ কণা। বাতাসে ভাসমান নানা ধরনের নানা আকারের দূষণ কণা থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর যাদের ব্যাস আড়াই মাইক্রন বা তারও কম। এদের বলা হয় পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ (বা, পিএম২.৫)। নিশ্বাসের মাধ্যমে এই পিএম ২.৫ সোজা চলে যায় ফুসফুসের ভিতরে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কলকাতার আশপাশের জেলায়, ব্যাপক আতসবাজি ফাটায় তৈরি হয়েছিল নাইট্রাস অক্সাইড। যা দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে থেকে বায়ু দূষিত করে। শুধুমাত্র ভারী বৃষ্টিই পারে এই দূষণ কমাতে। কিন্তু আপাতত বৃষ্টির কোনও দেখা নেই। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের সর্বাপেক্ষা তিন দূষিত শহরের মধ্যে দিল্লি, মুম্বইয়ের পরেই কলকাতা। দূষণ ঠেকাতে কালীপুজোর আগেই ৪০টি ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার নামিয়েছিল পুরসভা।
বাহাত্তর ঘণ্টা আগেই মেয়র জানিয়েছিলেন, রাস্তায় জল ছিটিয়ে ধুলো নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। দূষণের নিরিখে প্রথম তিন থেকে কুড়িতে চলে গিয়েছে কলকাতা। তার পরও কালীপুজোর রাতে এমন বেহাল অবস্থা কেন? কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, এত বড় সমুদ্র নিয়েও মুম্বই দূষিত শহরের তালিকায়। সমুদ্র দূষিত বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু কলকাতার সে জায়গা নেই। উলটে হাওড়ার দূষিত বাতাসও কলকাতায় এসে ঢুকছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, স্রেফ জল ছিটিয়ে শহরের দূষণ ঠেকানো অসম্ভব। পরিবেশবিদ স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কলকাতার জনঘনত্ব অত্যন্ত প্রাচীন। ধুলো ছাড়াও এখানে দূষণের উৎস একাধিক। স্প্রিঙ্কলারের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কিছু জায়গায় ধুলো কমানো গেলেও সার্বিকভাবে দূষণ কমানো সহজ নয়। আরও সবুজ প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, শহরজুড়ে এক কোটি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভাও। শুধু তাই নয়, ধুলো কমানোর জন্য রাস্তার সমস্ত গর্ত বুজিয়ে দিয়েছে পুরসভা। মেয়র জানিয়েছেন, শহরের সামান্য কিছু নির্মীয়মাণ আবাসন থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। আবাসন দপ্তরকে বলা হয়েছে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য। পুরসভার হিসাবে ২০২৩ এর ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। মেয়রের কথায়, “কলকাতার দূষণ কমাতে উপায় একটাই। গাছ লাগাতে হবে। তবেই কমবে দূষণ। আজকাল যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছি সকলকেই বলছি গাছ লাগান। আজ থেকে একশো বছর পরে আমি বেঁচে থাকব না। কিন্তু কলকাতাকে বাঁচাতে হলে গাছ প্রয়োজন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.