সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডে অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন কবীর সুমন। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন, ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এক বর্ষীয়সী মহিলাকে কদর্য ভাষায় অভিহিত করা, আক্রমণ করা কি কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য?
মঙ্গলবার ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিই। এই রাজ্য ও কলকাতার জন্য তিনি যা যা করেছেন – আমি কৃতজ্ঞ। তেমনি আমার মতে যে ভুলগুলি তিনি ও তাঁর দল করেছেন সেগুলি সম্পর্কে মোটামুটি অবহিত আমি। সঙ্গীতশিক্ষার্থী ও সঙ্গীতসেবক হিসেবে আমি তাঁর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ তিনি বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং সরকারের মঞ্চে আমাকে বাংলা খেয়াল পরিবেশন করার সুযোগ দিয়েছেন ব’লে। এই উক্তির জন্য কে আমায় কী বলেন ও বলবেন আমার যায় আসে না। আমার মাভাষায় খেয়াল রচনা করা, গাওয়া ও শেখানো আমার জীবনের সেরা কাজ, আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান, চাইকি একমাত্র কাজ। আমি বেঁচে আছি আমার মাভাষায় খেয়ালের জন্য।
মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি সম্মান করি, কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক একটি উক্তির আমি বিরোধিতা করছি। “উৎসবে ফিরুন”। “উৎসবে ফিরুন” – “অভয়া” বা “তিলোত্তমার” ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে যে ব্যাপক আন্দোলন চলছে, মাননীয়া মমতা যদি তার খবর সম্যক রেখে থাকেন ( যা তিনি রাখেন বা তাঁর রাখা উচিত বলে আমার ধারণা) তাহলে ঐ উক্তিটি করা তাঁর একেবারেই উচিত হয়নি। এই দেশে আর কোন কোন নৃশংস কাণ্ড ঘটছে তার প্রসঙ্গ না টেনেও বলব আর জি করের ঘটনায় অনেকেই রুষ্ট, অনেকেই আন্দোলনে নেমেছেন।
এই আন্দোলন এখন বিচিত্র রূপ ধারণ করেছে, করে চলেছে। গান লেখা গান গাওয়া কবিতা লেখা বলা শাঁখ বাজানো রাস্তায় হৈ হৈ করে উদ্দীপক গানের সঙ্গে নৃত্য করা রাস্তা জুড়ে ছবি আঁকা লেখা ইত্যাদি। সকলেই নিশ্চই মনপ্রাণ দিয়ে করছেন সবকিছু। আন্দোলনমুখী কর্মকাণ্ড কোথাও কোথাও উৎসবের রূপ নিয়ে ফেলছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে কি? কেউ কেউ আবার মহামতি লেনিনের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন যদিও কলকাতায় যে আন্দোলন আমি দেখছি তাতে নাগরিক উচ্চমধ্যবিত্ত হিন্দুদেরই দেখছি বেশি , আর লেনিন বেশি চিন্তিত ছিলেন শ্রমজীবীদের নিয়ে। কেউ কেউ এই আর জি কর আন্দোলনকে লেনিনিস্ট বিপ্লব পর্যন্ত বলে ফেলেছেন। এরকম অবস্থায় “উৎসবে ফিরুন” বলা খুবই কাঁচা কাজ, হৃদয়হীনতার পরিচয়। আন্দোলনকারীরা স্বাভাবিকভাবে রেগে গিয়েছেন। এমনিতে আমি মাননীয়া মমতার ভোটার ও প্রগ্রেসিভ বিপ্লবী মধ্যনাগরিক বাঙালিদের কাছে এক নিবেদিতপ্রাণ “চটিচাটা”। এ হেন আমিও মনে করছি “উৎসবে ফিরুন” কথাটা বলা অন্যায় হয়েছে।
একই সঙ্গে দেখেছি দেখছি আমায় যাঁরা ঘৃণা করেন সেই বঙ্গবানরা মাননীয়া মমতাকে “চটিপিসি” “চটিবুড়ি” ইত্যাদি নামে ডেকে চলেছেন। এঁরা নাকি এক মহিলাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে আন্দোলনে নেমেছেন। এঁরাই আবার প্রায় সত্তর বছর বয়সী এক মহিলাকে এইভাবে অপমান করছেন, যদিও, যা দেখলাম, তাঁকে ও তাঁর দলকে ভোটে হারিয়ে সরকার গঠন করার ক্ষমতা কারুরই নেই। CPIM উঠেই গিয়েছে বলা যায়। তাঁরা আছেন ফেসবুকে আর, মনে হচ্ছে, অভয়া-আন্দোলনের কোথাও কোথাও। কিন্তু ভোট হলে আবার তাঁরা শূণ্যে বিলীন হবেন বলেই অনেকে মনে করেন।
বিজেপি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে ক্রনিক আমাশায় ভোগা রুগীর মতো। অভয়ার জন্য বিচার চেয়ে রাস্তায় নামা এবং আর-একজন মহিলাকে সমানে কুৎসিৎ গালাগাল দিয়ে যাওয়া একই সঙ্গে চালানো যায় কি? “উৎসবে ফিরুন” অন্যায়, হৃদয়হীন উক্তি। আলবৎ। এক বর্ষীয়সী মহিলাকে কদর্য ভাষায় অভিহিত করা, আক্রমণ করা?’
সোমবার এক মাস অতিক্রান্ত হয়েছে আর জি কর কাণ্ডের। যদিও এখনও পর্যন্ত তদন্তের কিনারা করতে পারেনি সিবিআই। সঞ্জয় রায়ের পর দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গী। এহেন পরিস্থিতিতে এতদিন কোনও মন্তব্য করেননি কবীর সুমন। অবশেষে এই ইস্যুতে মুখ খুললেন ‘গানওলা’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.